দেশে প্রায়ই তরুণদের নিখোঁজ হবার খবর আসছে। আকস্মিকভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে কিছু তরুণ একেবারেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে সবার কাছ থেকে। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কেউই বলতে পারছে না তাদের এ রকম নিরুদ্দেশ হবার কারণ কি? এতে করে তাদের পরিবারের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা তো বাড়ছেই, সাথে সম্ভাব্য কোন নাশকতা হবার দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। এর কারণ গত জুলাইতে গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলাকারীদের সবাই এ রকমভাবে নিখোঁজ হয়েছিল। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যেসব জঙ্গি নিহত হয়েছে তাদের প্রায় সবাই ছিল নিখোঁজ। এখন যারা নিখোঁজ হচ্ছে তাদের নিয়েও এ রকম আশঙ্কা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
অতি সম্প্রতি গণমাধ্যমে সাত তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরা হলেন – মেহেদী হাসান, নিয়ামোতুল্লাহ্, তানভীর আহ্মেদ তনয়, জাকির হোসেন বিপ্লব, সাফায়াত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল ও সবুজ আলিয়াস সুজন। বয়সে এরা সবাই তরুণ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ১১ শিক্ষার্থী নিখোঁজ। এর মধ্যে একজন ছাত্রীও রয়েছে। বিষয়টি বেশ উদ্বেগের। এদের বর্তমান অবস্থান কোথায় হতে পারে তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই খুঁজে বের করতে হবে।
তবে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের যে সবাই একই কারণে নিরুদ্দেশ হয়েছে তা নয়, অনেকে পরিবারের উপর অযথা অভিমানেও পালিয়ে থাকতে পারে। আবার অনেকে রোমাঞ্চকর কোন কিছুর কারণে এ রকম করে থাকে। কিন্তু তারা জানে না যে এতে করে তাদের পরিবার ও স্বজনদের কি পরিমাণে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এদিকে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের কেউ কেউ জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য বাসা থেকে পালিয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এমনকি এদের বন্ধু ও পরিচিতজনদেরও এমন ধারণা। যারা জঙ্গিবাদের দিকে পা বাড়াচ্ছে তারাও তাদের পরিবারের কথা ভেবে দেখে না। তাদের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের জন্য তাদের পরিবারকে এক অসহনীয় লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়, তাদের কারণে অনেক নিরীহ তরুণ-তরুনীদেরও হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বিশেষ করে যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য মফস্বল অথবা গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে তাদেরকে ভোগান্তির শিকার হতে হয় বেশি। কারণ ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জঙ্গি ভয়ে অনেকেই তাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না।
এখন কে কোন কারণে পালিয়ে থাকতে পারে এবং সে অনুযায়ী তারা বর্তমানে কোথায় থাকতে পারেÑএসব বিষয়গুলো যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করা দরকার। সেই সাথে এদের কেউ কোন জঙ্গি দলের সাথে জড়িত হয়ে দেশের বাইরে যেন পাড়ি জমাতে না পারে সে ব্যাপারেও বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে। কেউ যদি দেশের বাইরেও চলে যায় তাহলে সে কোন দেশে চলে গেছে সে বিষয়ে দ্রুতই খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়টি কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যে কোন হামলা ঘটে যাওয়ার আগে তা প্রতিরোধ করার মত সাফল্য আর নেই। এখন সবকিছুই নির্ভর করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার উপর। এ ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা বাড়ানোটাই এখন বিশেষভাবে কাম্য।
অন্যদিকে, অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। সন্তান-সন্ততির সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে যেন সে সবকিছু তাদের বলতে পারে। ফলে বাবা-মাও তাদের সন্তান-সন্ততির মন-মানসিকতা ও আচরণ সম্পর্কে অবহিত থাকবে। অযথা বকাবকি কিংবা মারধোর কখনই কাম্য নয়। যারা তাদের সন্তান-সন্ততিকে মফস্বল অথবা গ্রাম থেকে ঢাকাতে পাঠাচ্ছেন তাদেরকেও বিশেষ সজাক থাকতে হবে। ছেলে কিংবা মেয়ে কোথায় পড়ছে, কোথায় থাকছে সে সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে। আর সন্তানদের কিংবা দেশের তরুণ সমাজকেও তাদের বাবা-মায়ের কষ্ট বুঝতে হবে। একজন বাবা ও একজন মা তার সন্তানকে অবশ্যই সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালবাসে এবং বাবা-মা সবসময় তার মঙ্গল কামনাই করবে। এসব বিষয়ে দেশের গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে ও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে বিশেষ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
এ পরিস্থিতিতে পরিবার, সমাজ, গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে যেন তরুণ-তরুণীরা বিপথগামী না হয়।