মাহিদুল ইসলাম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্মচারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে বেতন নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোম্পানির এমডির বেতন অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও সেই তুলনায় কোম্পানি ডিভিডেন্ট দেয়নি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে লিজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) প্রতিমাসে যে পরিমাণ আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি, ডিভিডেন্ট ঘোষণা এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টে।
আজ তুলে ধরা হলো মাইডাস ফাইন্যান্সিং পিএলসি সম্পর্কে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোম্পানিটি ২০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২০০২ সালে তালিকাভূক্ত হয়েছে। কোম্পানির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ১৪৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার ১৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৫০৭ এবং রিসার্ভ অ্যান্ড সারপ্লাস রয়েছে (৪৬) কোটি (২৬) লাখ টাকা।
কেম্পানিটির বিগত ৯ বছরের ২০১৫-২০২৩ পর্যন্ত বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বেতন ভাতা, মুনাফা, ডিভিডেন্ট ও অন্যান্য আর্থিক প্যারামিটার সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে,
২০১৫ সালে কোম্পানিটির এমডি মি. শফিক-উল-আজম বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। একই সময় কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ৩ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল .৩১ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ৭.১৩ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। বছরে ৩ কোটি টাকা প্রফিট করেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা যা প্রতি মাসে ৫ লক্ষ টাকার অধিক।
২০১৬ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় মি. শফিক-উল-আজম বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ২.৩২ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল ৮.০৬ টাকা। কিন্তু আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। বছরে ২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা প্রফিট করেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সুবিধা যা মাসিক ৮ লক্ষ টাকার অধিক।
এছাড়া ২০১৭ সালেও কোম্পানিটির এমডি মি. শফিক-উল-আজম বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৬৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ২২ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১.৮৯ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১১.৯১ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল। বছরে ২২ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রফিট করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৬৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা যা প্রতি মাসে ৫ লক্ষ টাকার অধিক।
২০১৮ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মি. মুস্তাফিজুর রহমান বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল .০৮ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১০.৯১ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২.৫০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে। বছরে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রফিট করে বিনিয়োগকারীদের ২.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা যা মাসিক হিসেবে ৫ লক্ষ টাকার অধিক।
২০১৫ সালে কোম্পানির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স ছিল ৫১৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা যা ২০১৮ সালে হয়েছিল ১০২৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরে ২০১৫-২০১৮ পর্যন্ত কোম্পানিটির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স বেড়েছে ৫০৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
পক্ষান্তরে, ২০১৫ সালে কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি ছিল ৩৪০ কোটি ২৫ লাখ টাকা যা ২০১৮ সালে হয়েছিল ৭৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরে ২০১৫-২০১৮ পর্যন্ত কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি বেড়েছে ৪০৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এছাড়া, ২০১৫ সালে কোম্পানিটির সংরক্ষিত ক্ষতি ছিল (৪৭) কোটি ৬ লাখ যা ২০১৮ সালে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৭৯ লাখ। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরে ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় বেড়েছে ৪৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
২০১৫-২০১৭ পর্যন্ত আলোচ্য ৩টি অর্থ বছরেই কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন মিসেস রোকিয়া আফজাল রহমান। তিনি ( রোকিয়া আফজাল রহমান) একজন শীর্ষস্থানীয় নারী উদ্যোক্তা। মিসেস রহমান ১৯৮০ সালে একটি কৃষি-ভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে তার ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে বীমা, মিডিয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রিয়েল এস্টেটে বৈচিত্র্য আনেন। তিনি (মিসেস রহমান) গ্রামীণফোন লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ল্যাম্পস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স-আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস-চেয়ারম্যান; ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি-এর ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য এবং ব্র্যাক গভর্নিং বডির সদস্যও ছিলেন। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলে ২০১৮ সালে কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরি।
একই সময় ২০১৫-২০১৭ কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মি. শফিক-উল-আজম। তিনি ১৯৮৬ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির আই.বি.এ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন এবং একই বছর তিনি প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে মাইডাসের সাথে পথচলা শুরু করেন পরে তার কৃতকর্মে সন্তুষ্ট হয়ে কোম্পানিটির বোর্ড অব ডিরেক্টর তাকে ২০১০ সালের মার্চে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে উন্নিত করেন। পরে ২০১৭ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থপনা পরিচালক পরিবর্তন হলে ২০১৮ সালে কোম্পানিটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করেন মি মুস্তাফিজুর রহমান।
প্রিয় পাঠক, আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল, সাথেই থাকুন।