সব জল্পনা-কল্পনা আর জনমত জরিপ ডিঙিয়ে অবশেষে জয়ের বিজয় মুকুট ছিনিয়ে নিলেন ডোনাল্ট ট্রাম্প। আগামী চার বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মার্কিন ধুনকুবের। দেশজুড়ে ট্রাম্প সমর্থকদের বিজয়োল্লাস। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের সমর্থকদের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিজয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি শুধু কোনো দলের নন, সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হতে চান। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমাদের অভিনন্দন।
বিশ্বের এক নম্বর শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এমনিতেই সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে থাকে কিন্তু এবারের নির্বাচন নানা কারণেই আরো বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সব নির্বাচনী ঐতিহ্য ম্লান করে দিয়ে এবার উভয় প্রার্থী পরস্পরের চরিত্র হনন ও ব্যক্তিগত আক্রমণে অনেক বেশি সরব ছিলেন। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী কিছু বক্তব্য সমালোচনারও ঝড় তুলেছিল। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল ফাঁস ও নির্বাচনের আগে আগে দুবার করে এফবিআইয়ের তদন্তে নামার বিষয়টিও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। তার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আমেরিকার ভোটাররা তাঁদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে যে রায় দিয়েছেন, তাকে আমরা শ্রদ্ধা ও স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের গতিশীল নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আরো এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি আরো ত্বরান্বিত হবে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, সারা দুনিয়ার রাজনীতি-অর্থনীতিতেও তার একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকেই বিশ্বের প্রধান প্রধান পুঁজিবাজারগুলোতে একধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যায়। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই কিছু পুঁজিবাজারে দরপতন ঘটে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও কিছু আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়। নির্বাচনের আগেই ট্রান্সপ্যাসিফিক চুক্তি বা টিপিপির বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতিবাচক বক্তব্য রাখায় এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। চুক্তিটি বাতিল হলে কিংবা অকার্যকর হয়ে গেলে তাদের আশঙ্কা এশিয়ায় চীনের প্রভাব অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই এশিয়ার কিছু দেশ নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণেরও আশঙ্কা করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে মেক্সিকোর সীমান্তজুড়ে উঁচু দেয়াল তৈরি করবেন এবং মেক্সিকোকেই তার খরচ বহন করতে হবে। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশ সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ন্যাটো জোটভুক্ত কিছু দেশের নেতারাও এই বিজয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে কূটনৈতিক মহলের ধারণা, নির্বাচনপূর্ব বক্তব্যে যা-ই বলা হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বা ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান আগের মতোই থাকবে।
আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে, নতুন নেতৃত্বের অধীনে তা আরো জোরদার ও গতিশীল হবে। ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুই দেশ আগের মতোই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে।