বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন দিনও আসে, যা জাতি হিসেবে আমাদের অপরাধী করে দেয়। যেমন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা। এ রকম জঘন্য এবং কলঙ্কজনক ঘটনা আমাদের জীবনে আর নেই। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তারিখটিও ইতিহাসে কালো অক্ষরে লেখা থাকবে। সেদিন বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্য তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ও তাঁর আদর্শিক সহযাত্রীদের হত্যার লক্ষ্যে ঘৃণ্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী, আওয়ামী লীগনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘটনায় আরো একবার স্পষ্ট হয়, বাঙালি জাতিসত্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক ও সর্বজনীন সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী শক্তির অস্তিত্ব বিনাশের ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। শোকাবহ ২১ আগস্টের এই দিনে আজ আমরা সেদিনের হতাহত প্রতিটি মানুষের ত্যাগকে স্মরণ করছি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নয়, বরং ধর্মাশ্রয়ী খেলাফত স্টাইলের দেশ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র থেকেই যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা বারবার চলছে, এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। উগ্রবাদী চিন্তা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেলে সমাজ ও রাষ্ট্র কী ঝুঁকিতে পড়তে পারে তার প্রমাণ আজকের জঙ্গিবাদ ইস্যু। সেদিন শেখ হাসিনা যদি নিহত হতেন, তাহলে বাংলাদেশের কী রাষ্ট্রীয় চেহারা আজ আমরা দেখতাম? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কি হতো? তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন যেভাবে প্রস্ফুটিত হচ্ছে, তা কি সম্ভব হতো? এসব প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়, পঁচাত্তরের ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারী, সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর উত্তরাধিকারীরাই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল এক ও অভিন্ন এবং দুটি ঘটনা একই সুতায় গাঁথা। গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা বিচার শুরু দূরে থাক, সুষ্ঠু তদন্তও শেষ করতে পারেনি। উল্টো সাজানো হয়েছিল জজ মিয়া নাটক। ফলে সাধারণ মানুষও ধরে নেয়, বিএনপি সরকারের সময় গ্রেনেড হত্যা মামলার বিচার হবে প্রহসনের নামান্তর। পরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে মামলা পরিচালনা ঢেলে সাজানোর পর স্পষ্ট হতে থাকে, কিভাবে বিগত সরকারেরই কিছু লোক বঙ্গবন্ধুকন্যাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে সমূলে বিনাশ করতে হামলার ছক এঁকেছিল। গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার গত এক যুগেরও বেশি সময়ে শেষ না হওয়া হতাশাব্যঞ্জক। এত বড় ষড়যন্ত্র যারা করতে পেরেছে, অবশ্যই তাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্র ইতিহাসে কম নেই। তবে আমরা ভেবে আতঙ্কিত, বাংলাদেশে এই ষড়যন্ত্র শুধু ক্ষমতার লোভ থেকে নয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের প্রেতাত্মারা বাঙালি জাতির স্বাধীন অস্তিত্বই মেনে নিতে পারছে না। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট সবার বোধোদয় ঘটবে, শতভাগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠিত হবে এবং বাঙালি জাতি বিশ্বে নতুন আত্মপরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
তথ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা,
সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০