সম্পাদকীয় : ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কর্পোরেট কর হার ২.৫০% কমানোর প্রস্তাব করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, এতে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানির মধ্যে যারা লোকসানে রয়েছে তাদের কোন লাভ হবে না। কর হার কমানোর পুরো সুবিধাই পাবে মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলো অর্থাৎ মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলোর মুনাফা আরও বাড়বে। পক্ষান্তরে করহার কমে যাওয়ায় লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর লোকসান কমবে না। অবশ্য কর্পোরেট সেক্টরের অনেক কোম্পানি আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ও অপারেটিং কষ্ট বেশি দেখায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট খরচ লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে নেয়। ফলে ব্যবসায় প্রফিটের একটা বড় অংশ বিভিন্ন হেডে প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যাক্তিদের পকেটে চলে যায়। ঐ সকল কোম্পানির টেক্স হার শূণ্য হলেও কোম্পানির প্রফিটের কোন পরিবর্তন হবে না। কোম্পানি কোন প্রফিটে আসবে না। ঐ সকল কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট তালিকাভূক্ত বা নন তালিকাভূক্ত সে সবের কোন তোয়াক্কাই করে না। পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে রমরমা ব্যবসা না করলেও কর্তাব্যাক্তিদের চলাফেরায় রাজকীয় ভাবসাবের কোন কমতি দেখা যায় না। শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া এবং সরকারকে টেক্স দেওয়া তাদের চিন্তায় আসে না। আমাদের দেশে করপোরেট পলিসি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে করে বছরের পর বছর লোকসান দেখিয়েও তারা দিব্যি ব্যাংক সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের চিন্তা খুবই কম। এ জন্য দায়ী বাংলাদেশের করপোরেট পলিসি।
চলতি বছরের বাজেট প্রস্তাবনায় দেখা গেছে কর্পোরেট টেক্স হার কমানো হলে দেশের ১৫/২০ টি তালিকাভূক্ত কোম্পানির নিট মুনাফা পূর্বের তুলনায় বাড়বে। কোম্পানি গুলোর মধ্যে বিএসআরএম, একমি ল্যাবরেটরিজ, বিএসআরএম স্টিল, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বেক্সিমকো লিমিটেড, বসুন্ধরা পেপার, জিপিএইচ ইস্পাত, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, এপেক্স ফুটওয়্যার, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনেটা লিমিটেড, তিতাশ গ্যাস, পাওয়ার গ্রিড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্ট, লাফার্জহোলসিম, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এমজেএলবিডি।
মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলো যেহেতু ২.৫০% টেক্স সুবিধা পাচ্ছে সে কারনে তাদের নিট মুনাফা আড়াই শতাংশ বাড়বে। এর ধারাবাহিকতা হয়ত প্রথম বছর থাকবে তারপর কোম্পানিগুলো ম্যানেজমেন্ট ওভারহেড বাড়িয়ে ঐ আড়াই শতাংশ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যাক্তিদের পকেটে চলে যাবে। আর ভাল ম্যানেজমেন্টের কতিপয় কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বাড়িয়ে তাদের কে খুশি করার চেষ্টা করবে। আবার কেউবা ২.৫০% টেক্স এর টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা রেখে সঞ্চিতি বাড়াবে যেন ইকুয়িটি বাড়ে। আবার কেউ কেউ ঐ প্রফিটের টাকায় নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান খুলে নতুন করে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করবে। তাদের ক্ষেত্রে কর্পোরেট টেক্স হার কমানোর সুফল দেখা যাবে।
বস্তুত, এ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করহার কমানোর পাশাপাশি কর প্রদানের মানসিকতা বাড়ানোরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। আবার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে টেক্স এর হার কমিয়ে করদাতার পরিমান যদি বাড়ানো সম্ভব হয় তাহলে সেটা হবে রাজস্ব খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা সে দিনের অপেক্ষায় রইলাম।
সুতরাং আমরা বলতেই পারি টেক্স হার কমলেই কি আর বাড়লেই কি ! যেসব কোম্পানি টেক্স দেয় না তাদের কাছে সবই সমান। যারা টেক্স দেয় না তাদের টেক্স এর আওতায় আনাটাই হতে পারে এ বছরের বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য।