মো. মিজানুর রহমান এফসিএস; পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিএসইসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৫ মে, ২০২০ থেকে নতুন চেয়ারম্যানের মেয়াদ শুরু হবে। অবশ্য অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম রোববার (১৭ মে, ২০২০) বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করে কমিশনের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।
এছাড়াও কমিশনার পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পাল এফসিএ, সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম ও একেএম দেলোয়ার হোসেন এফসিএমএ সহ আরো ৪ জন অর্থাৎ ৯ জনের মধ্যে যেকোন তিনজন নিয়োগ পেতে পারেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সুত্রে জানা গেছে।
যারা কমিশনার হওয়ার তালিকায় রয়েছেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও অজিত কুমার পাল বর্তমানে জনতা ব্যাংকের পরিচালক এবং একেএম দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএসইসিতে শুধু একজন কমিশনার রয়েছেন। আর তিনজন কমিশনারের পদ ফাঁকা থাকায় তারা যেদিন যোগ দেবেন সেদিন থেকেই তাদের মেয়াদ কার্যকর হবে।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ঢেলে সাজানো হয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসিকে। এরই ধরাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান খোন্দকার কামালুজ্জামান। তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এ, ৪ কমিশনারের পদ থাকলেও তাদের মধ্যে মো. আমজাদ হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে ৩০ এপ্রিল। এরপর গত ২ বছর ধরে কমিশনের ওই পদ খালি রয়েছে, কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। আর অন্য ২ জনের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদও শেষ হয়েছে ১৪ মে, ২০২০। বিএসইসি’র নতুন চেয়ারম্যান পাওয়া গেলেও কার্যত ৪ জনের মধ্যে এখন মাত্র একজন কমিশনার বর্তমান রয়েছেন। ফলে চলতি সপ্তাহেও কোরাম সংকটে রয়েছে বিএসইসি‘র বর্তমান কমিশন। যা দেশের পুঁজিবাজারের জন্য কোনভাবেই ইতিবাচক নয়।বিএসইসি’র মতো এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় যদি সরকার সময় মতো পদ পূরণে ব্যার্থ হয় তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন চলবে কিভাবে ? আর দেশের পুঁজিবাজার ঠিক হবে কি করে?
বিএসইসি’র চেয়ারম্যানসহ কমিশনের সদস্য সংখ্যা ৫ জন যাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান, কর্মদক্ষতা, সততা ও প্রফেশনাল হওয়া আবশ্যক। বিএসইসি’র নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম যথেষ্ঠ মেধাসম্পন্ন, সুশিক্ষিত ও সাহসী মানুষ, আশাকরা যায় বিএসইসি’র অভিভাবক হিসেবে তিনি ভালো করবেন। যদিও বিএসইসি’র কোন কমিশনই মার্কেট ঠিক করার নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না, এর সমাধান একমাত্র পুঁজিবাজারে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা তথা এসডিজি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার উপর নির্ভর করে, যখন তা বাস্তবায়ন ও কার্যকর হবে কেবল তখনই মার্কেট স্বাভাবিক হবে।
কাজেই সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ রাখছি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে কমিশনার হিসেবে কর্পোরেট প্রফেশনালদের কাজে লাগানোর জন্য, যারা দায়ীত্ব নেয়ার আগেই পুঁজিবাজার সম্পর্কে সম্যকভাবে বুঝে দায়িত্ব নেবেন। আর এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে প্রফেশনালদের মধ্যে যারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জানেন এবং বোঝেন তাদের সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন। সম্ভব হলে বিএসইসি’র কমিশনে সিএ, সিএমএ ও সিএস প্রত্যেক প্রফেশন থেকে অন্তত একজন করে হলেও নিতে পারেন যারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জানেন, কারন এই ৩ প্রফেশনেই বিএসইসি’র কমিশনে কাজ করার মতো যথেষ্ঠ যোগ্য প্রফেশনাল রয়েছে। যদিও প্রস্তাবিত তালিকায় সিএস প্রফেশন এর কারো নাম কোন মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
তারপরও যেহেতু কমিশনারদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও চুড়ান্ত হয়নি আর যেহেতু বাংলাদেশের তিনটি কর্পোরেট প্রফেশনাল বডির মধ্যে সিএস প্রফেশনও একটি সুতরাং প্রধান মন্ত্রীকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি বিএসইসি’র কমিশনে সিএস প্রফেশন থেকে একজনকে কমিশনার পদে সুযোগ দেওয়ার জন্য।
আর আমরা যারা কর্পোরেট প্রফেশনাল হিসেবে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্ঠা করছি, পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করছি, চাইলে আমাদেরকেও সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন খারাপ হবেনা বরং আগের চেয়ে ভালোভাবে হবে। আর শেষকথা হলো মার্কেট স্বাভাবিক হওয়ার একমাত্র সমাধান পুঁজিবাজারে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা তথা এসডিজি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, যখন তা কার্যকর হবে কেবল তখনই মার্কেট স্বাভাবিক হবে তার আগে নয়।
আর যেহেতু সব হিসাব চুড়ান্ত করবেন প্রধান মন্ত্রী সে কারনে শেষ পর্যন্ত কোন হিসাব নাও মিলতে পারে, ফলে এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে কমিশনার হিসেবে কর্পোরেট প্রফেশনালদের কারই ঠাই হয়নি অর্থাৎ সবাইকে পেছনে ফেলে অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম ও অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান হয়ে যেতে পারেন বিএসইসি কমিশনার।