মো. মিজানুর রহমান এফসিএস; ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর বিএসইসিকে পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে পুরনো কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করা হয়। আর এই নতুন কমিশনের দায়িত্ব পান রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি’র চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির শিক্ষক অধ্যাপক প্রফেসর ড. এম খায়রুল হোসেন। কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আরিফ খান। পরে আরিফ খান স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে গেলে কমিশনার হিসেবে দায়ীত্ব পান ড. স্বপন কুমার বালা।
অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন বেশ কিছু আইনের সংস্কার করেছেন। স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক ফোরামে বিএসইসির সদস্য পদ এ ক্যাটাগরিতে উন্নীতকরণ, স্মলক্যাপ বোর্ডের আইন প্রণয়ন, করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড প্রণয়ন, ইসলামী শরীয়াহর বন্ড সুকুক এর জন্য আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু সাফল্য আছে এই কমিশনের।
বেশ কিছু অর্জন থাকলেও সেকেন্ডারি বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ফলে থেমে থেমে বাজারে টানা দর পতন হয়েছে পুরো মেয়াদ জুড়ে। গত মার্চ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে।
ইতোমধ্যে কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি কমিশন থেকে বিদায় নিয়েছেন। গত ১৫ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হয়। তিনি তার পুরনো কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেছেন। এসপ্তাহে মেয়াদ শেষ হচ্ছে বিএসইসির কমিশনার ওয়ান প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামীর অতঃপর আগামী ১৪ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে।
ফলে অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ছে বিএসইসি ও দেশের পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ও চেয়ারম্যানের মেয়াদ একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে তাদের বিপরীতে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়নি এখন পর্যন্ত।
প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী বর্তমান সময়ের একজন দুরদর্সী, প্রফেশনাল ও খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ব। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দয়ীত্ব পালনের জন্য প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী একজন যোগ্য লোক, ওনাকে এক মেয়াদের জন্য বিএসইসি’র প্রধানের দায়ীত্ব দিলে বিএসইসি তথা দেশের পুঁজিবাজারের অনেক সমস্যার সমাধান হতো। ওনার মতো সৎ, যোগ্য ও সাহসি লিডার বর্তমানে খুব কমই দেখা যায়। প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামীকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দয়ীত্ব পালনের সুযোগ দেয়া দরকার, অতএব সরকার প্রধানের কাছে সবীনয় অনুরোধ রাখছি বিষয়টি বিবেচনার জন্য।
উল্লেখ্য; ২০১১ সালের ৪ মে বিএসইসিতে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী। তিনি প্রথমবার ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আবার পুনঃনিয়োগ হয় এবং সর্বশেষ তাকে আরো ২ বছরের জন্য নিয়োগ দেয় সরকার, যার মেয়াদ চলতি বছরের মের প্রর্থম সপ্তাহে শেষ হচ্ছে। হেলাল উদ্দিন নিজামী বিএসইসিতে যোগদানের আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিষ্টেমস বিভাগে অধ্যাপনা করেন।এতদিন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিষ্টেমস বিভাগের সঙ্গে অধ্যাপনা থেকে ডেপুটেশন নিয়ে বিএসইসিতে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাণিজ্য বিভাগে ১৯৮০ সালে এসএসসি, ১৯৮২ সালে এইচএসসি পাস ও ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক ও ১৯৯০ সালে ফিন্যান্সে স্নাতকোত্তর করেন। বর্তমানে প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী দেশী-বিদেশী অনেক প্রফেশনাল বডির সাথে সম্পর্কযুক্ত আছেন। তিনি বর্তমান সময়ের একজন দুরদর্সী, প্রফেশনাল ও খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ব।