শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য কম নয়, পাশাপাশি ব্যর্থতাও যে নেই, তাও বলা যাবে না। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে এলেও ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে না। নানা কারণে তারা পিছিয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বড় অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা কমে গেছে। সব ক্ষেত্রেই কোচিং-প্রাইভেট বা নোট-গাইড বইয়ের দাপট। মুখস্থ বিদ্যা পরিহার করে শিক্ষার্থীরা বুঝে শিখবে ও লিখবে, তা প্রায় ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। আবার শিক্ষকরাও সব শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দেন না। ফলে মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির একটি গবেষণা বলছে, সব বিদ্যালয়েই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী রয়েছে, যাদের পড়া আত্মস্থ করতে একটু বেশি সময় লাগে। সেক্ষেত্রে বিশেষ যতœ নিয়ে তাদেরও প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সহানুভূতি ও ভালোবাসার অভাবের কারণে এ দুর্বল শিক্ষার্থীরা তা বুঝতে পারে না। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, পিছিয়ে পড়া এসব শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশের যত সমস্যা, তার ৬৪ শতাংশই হয় শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে। যেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখায় পিছিয়ে, তাদেরও সুপ্ত মেধা আছে। সেটি বিকশিত করা গেলে তাদের পক্ষে ভালো ফলাফল করা সম্ভব। এসব দিক বিবেচনা করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আলাদা করে পাঠদানের সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে একই বিষয়ে লিখন কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে; যা নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিদিন প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি শব্দ সঠিক উচ্চারণে পড়া ও লেখা শেখানো নিশ্চিত করতে গৃহীত কর্মসূচি সঠিকভাবে পরিচালনার তাগিদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সঠিকভাবে লেখাপড়া করছে কি না; তা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মনিটরিং কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ভুক্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি ও পিটিআই নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা কালে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা প্রাপ্ত প্রশিক্ষণের আলোকে ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন কি না; তা মনিটরিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
শিক্ষা যেন সর্বজনীন হয়, তা রাষ্ট্রকেই দেখতে হবে। যেসব কারণে মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পিছিয়ে পড়া রোধে আরো বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। যার ফলে প্রয়োজনীয় পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সেদিকেও নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা যাতে ভীতিকর না হয়ে আগ্রহের বিষয় হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়া রোধে সরকার যত দ্রুত সংসদীয় কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে; ততটাই হবে শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গল।