যেসব ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে না, সেসব ব্যাংক আমানত হিসেবে সরকারি তহবিলের অর্থ পাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর জন্য এই নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এমনকি যারা ইতোমধ্যে ৯ শতাংশে ঋণের সুদহার নামিয়ে আনতে পারেনি, সেসব ব্যাংকও এ সুবিধা পাবে না। ২০ মে, সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এমন কঠোর নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এ নির্দেশনার মধ্য দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে তৎপর হবে। বন্ধ হবে এ ব্যাপারে তাদের গড়িমসি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছর ১ জুলাই থেকে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত গত ১০ মাসেও কার্যকর করেনি বেসরকারি ব্যাংকগুলো। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে না নামিয়ে তারা শুধু বিএবির সিদ্ধান্তই উপেক্ষা করেনি, অমান্য করেছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও।
উল্লেখ্য, শিল্পে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অর্থনীতির গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে গত বছর ১৪ মে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার ঘোষণা দেন ব্যাংক মালিকরা। এজন্য তারা সরকারের কাছ থেকে কয়েক দফা সুবিধাও আদায় করে নেন। শুধু তাই নয়, বাজেটে ব্যাংক মালিকদের বেশি মুনাফার জন্য এ খাতের কর্পোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া স্বল্প সুদে সরকারি আমানতের নিশ্চয়তাও পায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো। কিন্তু নানা সুবিধা আদায় করে নিয়েও কথা রাখেননি ব্যাংক মালিকরা। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট করার সিদ্ধান্তটির বাস্তবায়ন এড়াতে নানা কৌশল ও শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নিয়েছেন তারা। এ প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন নির্দেশনাটি এলো। ঋণের উচ্চ সুদহার দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের পথে অন্যতম বাধা। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। গ্যাস সংকট, বিদ্যুতের ঘাটতি এবং ডলারের উচ্চমূল্যসহ নানা কারণে ব্যবসা পরিচালনা করা বর্তমানে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি অনুধাবন করেন।
গত ৩১ মার্চ রোববার জাতীয় শিল্পমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। এ সময় ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়লে এবং নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠলে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। অর্থাৎ এর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নতির প্রশ্ন জড়িত। এ কারণেই ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাটা জরুরি।
যেভাবেই হোক এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ঋণের সুদহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ব্যাংকগুলোর অনিয়ম। যথাযথ নিয়ম না মেনে ঋণ দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলোকে সংকটে পড়তে হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা গেলে ব্যাংকের তারল্য সংকট কমে আসবে। এর ফলে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সহজ হবে তাদের পক্ষে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ জায়গাটিতে দৃষ্টি দেয়া।