বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অব্যাহতভাবে বাড়ছে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ি গত পাঁচ বছরে দেশে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ১৫.২৬ শতাংশ। এ সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ে ৩৫.১৭ শতাংশ আয়কর ও অন্যান্য খাত ৩৬.০৭ শতাংশ স্থানীয় পর্যায়ে মূসক এবং শুল্ক আদায় হয় ২৮.৭৬ শতাংশ। বর্তমানে ইটিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ৩৮ লাখের বেশি।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, আদায় হয় এক লাখ ২০ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধি হয় ১০.৬৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক লাখ ৩৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা, আদায় হয় এক লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৩২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, আদায় এক লাখ ৫৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪.৬০ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, আদায় হয় এক লাখ ৮৫ হাজার তিন কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮.৯৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে ৩০জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয় দুই লাখ পাঁচ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এ সময়ে এনবিআরের প্রবৃদ্ধি হয় ১৯.৭৩ শতাংশ।
এনবিআর এর প্রযুক্তিনির্ভর রাজস্ব আদায় পদ্ধতি, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি, অর্থপাচার, রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দেওয়া বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্বের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। বিষয়টিকে দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে, রাজস্ব আদায় বাড়লেও বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকায় প্রতিবছরই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়েছে। নতুন আয়কর, ভ্যাট এবং শুল্ক আইন এবং সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভরতার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া সত্বেও বন্ধ হয়নি মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এনবিআরের কার্যক্রমে আগের চেয়ে গতি বাড়লেও তা যথেষ্ট নয়। অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। এসব বিষয়ে আরো গুরুত্ব বাড়াতে হবে।’
জানা গেছে, রাজস্ব ফাঁকি রোধে এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযান চালিয়ে অনেক রাজস্ব ফাঁকিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। মিথ্যা তথ্য সরবরাহকারীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। অর্থপাচার রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ ৩৩টি দেশের সঙ্গে অর্থপাচার রোধে নতুন সমঝোতা হয়েছে। এসব দেশের সরকার অর্থপাচার রোধ, পাচারকৃত অর্থ ফেরতে এবং পাচারকৃত অর্থ থেকে রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতায় রাজি হয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভরতায় রাজস্ব আদায়ে এনবিআর ই-পেমেন্ট, ই-ফাইলিং, ই-রিটার্ন চালু করেছে। অনলাইনে টিআইএন দেওয়া হচ্ছে।
করদাতাদের হয়রানি কমাতে প্রযুক্তিনির্ভরতায় কর আদায় একমাত্র উপায়। প্রযুক্তিনির্ভরতায় রাজস্ব আদায়ের অনেক উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও সীমিত আকারে পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে এনবিআরকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
আরো পড়ুন: পর্নোগ্রাফিক আসক্তিরোধে আইনের পাশাপাশি দরকার সামাজিক আন্দোলন