আমাদের দেশে প্রতিবছর স্বর্ণের চাহিদার পরিমাণ প্রায় ৪০ মেট্রিক টন। যার প্রায় ৩৬ মেট্রিক টন চাহিদা পূরণ করা হয় আমদানির মাধ্যমে। কিন্তু এই স্বর্ণ আমদানি কখনো কাগজে কলমে করা হয়নি।কারণ, গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি নিয়ে এতোদিন কোন নীতিমালাই ছিল না।
যে কারণে ব্যবসায়ীরা নীতিমালা ছাড়াই স্বর্ণ আমদানি করে আসছিল। এর ফলে এই ব্যবসাটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক গভীর সংকট। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে জানা সম্ভব ছিল না, কোন ব্যবসায়ী কত পরিমাণ স্বর্ণ আমদানি এবং বিক্রি করছে। সেই সংকট দূর করার লক্ষ্যে সরকার তৈরি করলো “স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮”। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই নীতিমালার ফলে এই খাতে সৃষ্ট সংকট দূর হবে।
এতদিন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পথে স্বর্ণ আমদানি করা হতো। বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আসতো চোরাইপথে। এখন নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক জুয়েলারি সমিতির কয়েকজন সদস্যকে ডিলার নিযুক্ত করবে। তাদের চাহিদা অনুসারে তারা স্বর্ণ বিক্রি করতে পারবে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব বোর্ড জানতে পারবে, কে কি পরিমাণ স্বর্ণ আমদানি ও বিক্রি করছেন।
এতদিন ব্যক্তিগতভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা আনার নিয়ম থাকলেও ব্যবসার জন্য বেশি পরিমাণে সোনা বৈধভাবে আমদানির সুযোগ ছিলোনা। এখন তারা চাহিদা মোতাবেক স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে।
এছাড়া নীতিমালা হওয়ার ফলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেসব অভিযান পরিচালনা করতো তার থেকেও মুক্তি পাবে।
নীতিমালা তৈরির আগে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলতেন, তারা সাধারণত ব্যক্তির কাছ থেকে কেনা স্বর্ণই দিয়েই স্বর্ণালংকার বানিয়ে বিক্রি করে থাকেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসার সময় বাংলাদেশীরা সেসব স্বর্ণ আনেন সেগুলোই মূলত বাজারে বিক্রি হয় বলে দাবি করেছিলেন তারা।
যদিও অনেক জুয়েলারি দোকানে কয়েক মন স্বর্ণ পাওয়া গেলেও তার পক্ষে কোন প্রমাণ পত্র দেখাতে পারেনি। তবে তাঁরা জুয়েলারি ব্যবসার জন্য একটি নীতিমালার দাবি করে আসছিলো দীর্ঘদিন ধরে। নীতিমালা হওয়ার পর বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি এটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, নীতিমালা হওয়ায় স্বর্ণ শিল্পী, ব্যবসায়ী ও সরকার সবাই উপকৃত হবে।
ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে স্বর্ণ কেনার সুযোগ তৈরি হওয়ায় এ শিল্প আরও বিস্তৃত হবে ও স্বর্ণ শিল্পীদের কাজের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে-সেটাই এখন প্রত্যাশা। এছাড়া স্বর্ণ নীতিমালা ছিলোনা বলে রপ্তানি করতে পারেনি, ব্যবসাও ঠিকমতো করতে পারেনি। এই নীতিমালার ফলে স্বর্ণ ব্যবসার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এখন সরকার যেমন রাজস্ব পাবে বেশি এবং চোরাচালানও কমে যাবে অনেকাংশ।