October 8, 2024 - 8:54 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসম্পাদকীয়ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশের সাথে সাথে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হোক

ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশের সাথে সাথে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হোক

spot_img

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজে রক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে শীর্ষ খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কী পরিমাণ ঋণ রয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের সবক’টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের তালিকাও প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। 

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে কার্যরত ৫৭টি তফসিলি ব্যাংক ও ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮। এসব খেলাপির কাছে অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৮টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। দেশের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ১৮ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৪০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৯ হাজার ২৮৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪ হাজার ৯০১ কোটি, বেসিক ব্যাংকে ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি, কৃষি ব্যাংকে ২ হাজার ১৭৮ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ২ হাজার ৩৩২ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৬৯৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৭৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বেসরকারি অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৯৮ কোটি, প্রাইম ব্যাংকে ৩ হাজার ৪৫৮ কোটি, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ৩ হাজার ৫২০ কোটি, এবি ব্যাংকে ২ হাজার ৯৪৭ কোটি, দ্য সিটি ব্যাংকে ২ হাজার ৬৭১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকে ২ হাজার ৭২ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবি) ২ হাজার ৫১৮ কোটি, পূবালী ব্যাংকে ২ হাজার ১১৬ কোটি, উত্তরা ব্যাংকে ১ হাজার ৪৫৭ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকে ১ হাজার ৬২৬ কোটি, ঢাকা ব্যাংকে ২ হাজার ৫৩১ কোটি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে ২ হাজার ১৮০ কোটি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ১ হাজার ১৫৭ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১ হাজার ১৯২ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ১ হাজার ৮২ কোটি, ওয়ান ব্যাংকে ১ হাজার ৩২৬ কোটি, এক্সিম ব্যাংকে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি, ব্যাংক এশিয়ায় ১ হাজার ৬৭৩ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ১ হাজার ৪৪৩ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংকে ১ হাজার ৭৬০ কোটি, ফারমার্স ব্যাংকে ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকে ১ হাজার ৩১ কোটি টাকা।

শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় এবারো প্রথম স্থানে আছে চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের নাম। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই সংসদে প্রকাশ করা শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকায়ও শীর্ষে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। দ্বিতীয় শীর্ষ ঋণখেলাপি বিদ্যুত খাতের প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেড। তৃতীয় শীর্ষ ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে এমএ আজিজের রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। ঋণখেলাপিদের তালিকায় চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম স্থানে আছে যথাক্রমে ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লি., রাইজিং স্টিল লিমিটেড, ঢাকা ট্রেডিং হাউজ, বেনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলস। দশম স্থানটি ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টসের।

ঋণখেলাপিদের মধ্যে দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নামকা ওয়াস্তে প্রতিষ্ঠান। ১০০’র বাইরে আরো যে ঋণ খেলাপী আছে তাদেরও তালিকা প্রকাশ করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করার কারণে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। তাঁরা বলছেন, শুধু ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করলেই হবে না, ঋণ আদায়ের জন্য নিতে হবে যথাযথ কার্যকরি পদক্ষেপ। গতবারের শীর্ষ ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এবারও ১ম স্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের দুর্বল নীতিকে দায়ি করেন অনেকে।

বাংকিং খাতকে সচল রাখার স্বার্থে খেলাপিঋণ আদায়ের কোন বিকল্প নেই। এছাড়া ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ, যে হারে খেলাপিঋণের পরিমাণ বাড়ছে তাতে করে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের গোটা অর্থনীতিতে।

এরপরও থেমে নেই নিয়ম বহি:র্ভূতভাবে ঋণ দেয়ার প্রবণতা। এক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ প্রদান ও আদায়ের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে প্রভাবশালীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও সুপারিশ। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ফিরিয়ে আনতে হবে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা। 

আরো পড়ুন: 

ধনীরাই আরও বেশি ধনী হচ্ছে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ