ধরুন আপনার এলাকার কোন কৃতিসন্তান উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য করে অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন, জীবনে সফলতা পেয়েছেন। এলাকার মানুষ তার সফলতাকে সম্মান জানিয়ে তাকে নানান অনুষ্ঠানে অতিথি করে থাকেন। তিনি তার সফলতার নানান গল্প মঞ্চে উপস্থাপন করেন এটাই স্বাভাবিক।
এখন কথা হচ্ছে তিনি কতটা সৎ থেকে ওই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন বিষয়টা এখানে।যদিও সফলতার চূড়া বলতে কিছু নেই, তবে আমি সফলতার একটা নির্দিষ্ট স্তর বুঝিয়েছি। সফল সব মানুষই অসৎ এটা আমি বলছি না।
যদিও বর্তমানে সৎ ভাবে চলে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো খুবই দুরূহ ব্যাপার, তবে এটাও সত্য একজন সৎ মানুষের যেটা আছে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েও সেটা অর্জন করা সম্ভব নয়।
বর্তমান সমাজে সৎ মানুষের টিকে থাকা খুব কঠিন ব্যাপার, সেটা সমস্ত সেক্টরে, কারণ আপনার আশেপাশের মানুষ অসৎ ভাবে চলতে চলতে অভ্যস্ত। আপনি সৎ থাকতে গেলে সবার কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক। সৎ থাকা না থাকা এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আবার প্রবাদ রয়েছে “সুযোগের অভাবে চরিত্রবান” এটাও বাস্তবতা। আপনার অসৎ হবার কোন সুযোগ যদি না থাকে তাহলে আপনি সহজেই হয়তোবা সৎ থেকে জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন। তবে যাদের আশেপাশে প্রচুর সুযোগ রয়েছে অসৎ হওয়ার তারা কতটুকু এভোয়েট করে সৎ থাকতে পারবেন সেটাই একটা ব্যাপার।
আগে ঘুষখোর মানুষের সাথে মানুষ আত্মীয়তা করত না, সুদখোর মানুষকে মানুষ ঘৃণা করতো। বর্তমান সমাজে এগুলো মামুলি ব্যাপার। ওইসব অসৎ ইনকামের টাকা দিয়েই বিভিন্ন জায়গায় হরহামেশায় চলছে সভা-সমাবেশ এমনকি ওয়াজ মাহফিলও।
লুটপাট, ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচার কারি, লম্পটরাই আজ বিভিন্ন জায়গায় মাথা উঁচু করে ভিআইপির সুবিধা পাচ্ছেন। ওই টাকার আংশিক খরচ করে বনে যাচ্ছেন রাজনীতিক নেতা কিংবা এমপি-মন্ত্রী।
পেশাগতভাবে সাংবাদিক পেশায় কর্মরত ছিলাম দীর্ঘ ৭-৮ বছর, বর্তমানে কোন মিডিয়া হাউজ এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত না থাকলেও এই পেশাটাকে আমি শ্রদ্ধা জানিয়েই আমার কলম চালানো বন্ধ করিনি, করবোও না যতদিন বাঁচি,ফ্রিল্যান্সার জার্নালিস্ট হিসেবে আমি অনিয়মিতভাবে লিখি।
আমার লেখা কাউকে আঘাত করার জন্য নয় প্রচলিত যে রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ ব্যবস্থা চলছে এটা চলতে থাকলে আমরা কোন জায়গায় পৌঁছাব ? এটা ভেবেই আমি আশাহত, তাই হয়তো ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে আত্বতৃপ্তি লাভের চেষ্ঠা।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থের পাহাড় তৈরি করে নানাভাবে অনেকেই সমালোচিত। তবে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাদের শক্তি এতটাই যে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও হিমশিম খাচ্ছে এগুলি সামাল দিতে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনি হাজার-হাজার কোটি টাকা কামিয়ে আপনার জীবনের আয়ু কি এক ঘন্টার জন্য বৃদ্ধি করতে পারবেন? অথবা আপনি নিশ্চিন্তে নাক ডেকে রাত্রে ঘুমাতে পারেন? মানুষের এক জীবনে কতোটা সম্পদ প্রয়োজন? আর এই সম্পদের নেশায় মানুষ কতটা মরিয়া?
একটু থামুন। একবার একটু নিরবে ভাবুন, আপনার সম্পদ আরোহণের পন্থাটা কতটা সঠিক? কত মানুষের অপ্রিয় হয়ে উঠেছেন আপনি? হয়তোবা আপনার পাশে অনেকেই রয়েছেন কিছু সম্পদের লোভে, কিন্তু প্রকৃত ভাবে আপনি কি কারোর ভালোবাসা পেয়েছেন? আপনার সাথে যারা ভালবাসার অভিনয় করে আসছেন আসলে তারা সবাই লোভি।
কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া শাহেদের ঘটনায় দেখুন, তার আশেপাশের মানুষগুলো শেষ প্রান্তে এসে তার পাশে ছিল কি? এটা এক্সাম্পল দিলাম এরকম শাহেদের সংখ্যা বর্তমানে আমাদের দেশে হাজারে হাজার। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাই যেন অসতের বেড়াজালে বন্দি। এখানে সৎ মানুষের সংখ্যা খুবই কম, কাজেই এ ব্যবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। বাস্তবতা এটাই।
আসুন আমরা সবাই একটু নিরবে ভাবি এবং অনুধাবন করি, অসৎ নেশা পরিহার করি, সৎ ভাবে চলতে শিখি।
লেখক: মিজানুর রহমান হেলাল
(সাংবাদিক ও ফ্রিল্যন্সার)