মো. মিজানর রহমান এফসিএস; বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় গত ২৪ মার্চ বিএসইসির ৭২৩তম কমিশন সভায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতিতে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এজিএম ও ইজিএম আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধরাবাহিকতায় এ পর্যন্ত কতিপয় কোম্পানি অনলাইনে এজিএম সম্পন্ন করেছে। তবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন এ পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন প্রচার প্রচারনা না থাকায় এবং অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভাল ধারণা না দেওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী অনলাইন এজিএমে শরিক হতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
একই সঙ্গে অনলাইন এজিএমে অংশ নিতে না পারায় কোম্পানির আর্থিক হিসাব বিবরণীর বিভিন্ন ত্রুটি, বিচ্যুতি ও গরমিলের বিষয়ে প্রশ্ন করা; বিবরণীর ওপর অবাধ আলোচনা এবং এজেন্ডা অনুমোদনে ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের ধারনা ও তারা মনে করেন যে, এজিএমের নোটিশ ও অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের ইমেইলে জানানো হয়েছে। ফলে স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে অনলাইনে এজিএম সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
কোম্পানিগুলো কবে অনলাইনে এজিএম করবে তার নোটিশ আগের নিয়মে পত্রিকায় প্রকাশ করলেও মার্কেট বন্ধ থাকায় এবং ইমেইল বিড়ন্বনায় অনেক বিনিয়োগকারী সেই নোটিশ পাননি। ফলে নতুন এ ধরনের এজিএমে কীভাবে বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করবেন সে বিষয়ে পুরো প্রক্রিয়া না বোঝার কারণে ও অনলাইনের সার্ভার জটিলতায় অনেক বিনিয়োগকারী এজিএমে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। আর যারা অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকেই কথা বলার সুযোগ তেমন পাননি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা অভিযোগ।
তবে অনলাইনে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হওয়ার করনে বেশ বেকায়দায় পড়েছে এজিএম পার্টির সদস্যরা যারা নামে বেনামে এজিএম এ উপস্থিত থেকে নিজেদের বিনিয়োগকারী পরিচয়ে বার্ষিক সাধারণ সভার বারোটা বাজিয়ে থাকেন। আর কথিত এজিএম পার্টির ভয়ে বেশ তটস্থ ও নড়েচড়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় থাকতেন এজিএমএ উপস্থিত কোম্পানিগুলোর কর্তা বাবুরা । অর্থাৎ অনলাইনে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হওয়ার করনে কপাল পুড়েছে এজিএম পার্টির আর কপাল খুলেছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কোম্পানি সচিব তথা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত সভাসদদের।
অবশ্য সকল বিনিয়োগকারী যেন অনলাইন এজিএমে অংশ নিতে পারে সেজন্য কোম্পানিগুলোকে শক্তিশালী সার্ভার ব্যবহার করতে হবে। মতামত ও প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। অনলাইনে এজিএম করা আমাদের জন্য নতুন বিষয় ফলে সেক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। তবে সে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিএসইসিকেই নিতে হবে। আর অনলাইনে এজিএম করার ক্ষেত্রে সুবিধা যেহেতু সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কোম্পানি সচিব তথা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত সভাসদদের, সেকরনে এই ব্যবস্থাকে সচ্ছতার মাধ্যমে সামনে স্থায়ি করার দায়িত্বও তাদের যাতে করে নতুন এই বিষয়টি নিয়ে কারো কোন অভিযোগ না থাকে।
তবে ডিজিটাল বা ম্যনুয়াল যে মাধ্যমেই এজিএম ও ইজিএম হোকনাকেন আয়োজকদের এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ভোটিং অধিকারসহ অন্যান্য আইনি অধিকার যাতে নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে নজর দিতে হবে বিএসইসিকে। আর এক্ষেত্রে ইজিএম ও এজিএমে স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসইসি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যদিও ইজিএম ও এজিএমে কোনদিন কখনো সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার বাস্তবায়ন হয়নি তারপরও চেষ্ঠা করতে হবে এবং সবাইকে সৎ ও ভালো মানুষ হতে হবে তাহলেই আর কোন বিতর্ক থাকবেনা।