September 20, 2024 - 2:28 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসকর্পোরেট সেক্টরের স্পেশালাইজড প্রতিষ্ঠান ‘আইসিএসবি’: আব্দুল আলীম

কর্পোরেট সেক্টরের স্পেশালাইজড প্রতিষ্ঠান ‘আইসিএসবি’: আব্দুল আলীম

spot_img

মাহমুদুন্নবী জ্যোতি: বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করা এবং কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে দক্ষ ও পেশাদার চার্টার্ড সেক্রেটারি তৈরি করছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)। এ প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিশেষ করে পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত কোম্পানির সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। সম্প্রতি আইসিএসবি’র ৭ম কনভোকেশনে ৯১ জন সিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্পোরেট সংবাদ সর্বশেষ সিএস ডিগ্রী অর্জনকারীদের নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সে ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের অতিথি মোঃ আব্দুল আলীম খান এসিএস।

মোঃ আব্দুল আলীম খান এসিএস ১৯৮৩ সালের ২০ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ আলীফ আলী খান এবং মাতা ফেরদৌস আরা। ৩ ভাই-বোনের মধ্যে অন্য ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ও জনতা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং বোন গৃহিনী। শিক্ষাগত জীবনে তিনি সিরাজগঞ্জ বি এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে ১ম বিভাগ স্টার মার্কস নিয়ে এসএসসি (বিজ্ঞান), সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি, জাবি থেকে স্নাতক সম্মান এবং ঢাবি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। কথা হচ্ছে আব্দুল আলীম খানের সাথে।

কর্পোরেট সংবাদ: ক্যারিয়ার শুরুর কথা জানতে চাই।
মোঃ আব্দুল আলীম খান এসিএস: ইচ্ছে ছিল আর্মি অফিসার হওয়ার। সে লক্ষে ২০০১ সালে বাংলাদেশ নেভিতে আবেদন করে আইএসএসবি হতে বাদ পড়েছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার ২০০৭ সালে আগেই সরকারি একটা চাকুরিতে ঢুকি। জেলা অফিসে কাজ করার পর উপজেলা পর্যায়ে বদলী করা হয়। এরই মাঝে বিসিএস, ব্যাংকসহ অন্যান্য চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকি। চাকুরির সুবাদে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে প্রায়ই সভা/যোগাযোগ করতে হত। সে সময় ইউএনও ও এসিল্যান্ড আমাকে খুব বকাবকি করতেন। বলতেন বিসিএস দিয়ে এডমিন ক্যাডার অথবা বিআইবিএম এ পড়ে ব্যাংকের চাকুরি করতে। সে সময় বিআইবিএম’র ১৩তম ইনটেক ব্যাচে সুযোগ পেয়ে ভর্তিও হয়ে যাই। ১ম সেমিস্টার অধ্যয়নরত অবস্থায়ই শাহ্্জালাল ইসলামী ব্যাংক এর ট্রেইনি অফিসার পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হই। দ্বিধায় ভুগছিলাম, এমবিএম কন্টিনিউ করবো নাকি ব্যাংকের চাকুরিতে ঢুকবো। আমার সাথে পড়তে আসা ৪/৫ জন চাকুরি পেয়ে ইতিমধ্যে বিআইবিএম ছেড়েছে। আমিও ভাবলাম ব্যাংকে ঢুকি আর বিসিএস এর চেষ্টা করি। ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় পোস্টিং হল। বিসিএস আর হয়নি। চাকুরিতে ঢুকেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করলাম ফিন্যান্স এ। কিন্তু মনের ভিতর একটা প্রফেশনাল শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করতে থাকি। এমবিএ ক্লাশমেট এক ভাইয়ের মাধ্যমে সিএস সম্পর্কে একটু জানতে পারি। তখন আমি ব্যাংকের রংপুর শাখায় কর্মরত। সালটা ২০১৩। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সিএস এ ভর্তি হই। রংপুর হতে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় এসে ক্লাশ করতাম। এখন ব্যাংকের হেড অফিসে ডিএমডি এবং চীফ অপারেটিং অফিসার স্যারের সাথে কাজ করছি।

কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবি থেকে প্রাপ্ত সনদ আপনার কর্মজীবনে কোন প্রকার ইতিবাচক প্রভাব কী?
আলীম খান: সত্য কথা হল প্রতিটি প্রফেশনাল ডিগ্রিধারীকে নন-প্রফেশনালরা ভয় পায়, সমীহ করে। আর এটাই স্বাভাবিক। সিএস ফাইনাল পাশের পর থেকেই সহকর্মীদের অনেকেই যেমন হিংসে করতেন; তেমনি খুব উৎসাহী হয়ে কয়েকজন সিএস এ ভর্তিও হয়েছিলেন। কোন শিক্ষাই বিফলে যায় না। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখন বেশ ভরসা পান যে কোন অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে। সিএস স্টুডেন্ট থাকাকালীন অনেকেই বলতেন এটা করে কী হবে। এখন তারাই বলেন ওয়াউ, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল!

কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় কোন বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন? কেন?
আলীম খান: গ্রুপ স্টাডি আর রেগুলার ক্লাশ। রেগুলার কøাশ হল রিসোর্স ব্যাংক মানে শিক্ষকদের নিকট হতে নানা বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক নলেজ গ্যাদার করা। আর গ্রুপ স্টাডি হল রিফ্রেশিং টুল অর্থাৎ ক্লাশের বাইরে সহপাঠীদের সাথে নানামুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অস্পষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা যেমন হত, তেমনি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়াটাও সহজ হত।

কর্পোরেট সংবাদ: কর্পোরেট সেক্টরে আইসিএসবি’র ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
আলীম খান: আইসিএসবি এ পর্যন্ত ৪টি সেক্রেটারিয়াল স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের কর্পোরেট জগতে এসব স্ট্যান্ডার্ড পরিপালনে বিএসইসি হতে নির্দেশনা এসেছে যা গেজেট আকারে গত জুন এ প্রকাশিত হয়েছে। আইসিএসবি হতে কোয়ালিফাইডগণ দেশের বিভিন্ন লিস্টেড, নন-লিস্টেড কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে সম্মানের সাথে কাজ করছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানেও কিছু মেম্বার রয়েছেন। আইসিএবি ও আইসিএমএবি এর প্রতিষ্ঠা বয়সের সাথে আইসিএসবি’র পার্থক্য প্রায় যথাক্রমে ২৫ বছর ও ২০ বছর। সে হিসেবে কর্পোরেট সেক্টরে আইসিএসবি’র ভূমিকা জোড়ালো বলেই প্রতীয়মান। তাছাড়া আইসিএসবি কর্তৃক কর্পোরেট গভার্নেন্স এক্সিলেন্স এওয়ার্ড প্রদান দেশব্যাপী প্রশংসিত।

কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবি’র কোন দিকটাকে সবচেয়ে সফল বলে আপনি মনে করেন? দুর্বল কোনো দিক থাকলে সেটি কী?
আলীম খান: চার্টার্ড সেক্রেটারিশীপ এডুকেশনে এটি এখনো বাংলাদেশের ইউনিক প্রতিষ্ঠান। আইসিএসবি নিজেও একটি রেগুলেটরি বডি এবং আইসিএবি ও আইসিএমএবি’র মত দেশের বিভিন্ন প্রফেশাল বডির কাতারে যাওয়া, রিকোগনাইজ্ড হতে পারাটা বড় সফলতা। সিএস প্রফেশনাল এডুকেশন এবং জব প্লেসমেন্ট এর ব্র্যান্ডিং নিয়ে আইসিএসবিকে আরো নজর দিতে হবে বলে অনেকের সাথে আমিও একমত পোষণ করি।

কর্পোরে সংবাদ: এসিএস কোর্স করার সময় আইসিএসবি থেকে কী কোন প্রকার তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন? হয়ে থাকলে কী?
আলীম খান: তেমন কিছু মনে পড়ে না।

কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবি’র সিলেবাস নিয়ে আপনি কী পুরোপুরি সন্তুষ্ট?
আলীম খান: সন্তুষ্টু না থাকার কিছু নাই।

কর্পোরেট সংবাদ: আপনার কাছে কী মনে হয়, আইসিএসবি’র সিলেবাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন আছে?
আলীম খান: আসলে প্রফেশনালসহ সব শিক্ষাই হতে হয় যুগোপযোগি। সময়ের প্রয়োজনেই পরিবর্তন আসে, পরিবর্তন আনতে হয় বিভিন্ন বিষয়ে। কাজেই আইসিএসবি’র সিলেবাসও এর বাইরে নয়। গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড ফলো করেই এ সিলেবাস প্রণীত এবং এটি স্ট্যাটিক কিছু না। দেশের কোম্পানি আইন পরিবর্তিত হচ্ছে। আরো কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। সময়ই বলে দিবে সিলেবাস এর কী কী পরিবর্তন আনতে হবে!

কর্পোরেট সংবাদ: আগামী প্রজন্ম কেন আইসিএসবিতে পড়বে- এ বিষয়ে আপনার উপদেশ কী?
আলীম খান: স্টাডি আর আপডেটেট থাকার কোন বিকল্প নাই। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ল’ইয়ার, শিক্ষক সবাইকেই প্রফেশনালি আপডেট থাকতে হয়। তাছাড়া কর্মকে যত বেশি বিভক্ত করে সম্পন্ন করা যায়, ফলাফলের মাত্রা (সংখ্যাগত ও গুণগত) তত বৃদ্বি পায়। কর্পোরেট জগতের পুরো সাইকেলকে আরো স্পেশালাইজড করলে প্রফিবিলিটি বাড়বে। ১০০ টাকার ১% আর ১ টাকার ১০০% সংখ্যাগত মূল্য সমান হলেও গুণগত পার্থক্য আছে। দিন দিন সাধারণ চাকরিরই বাজার খারাপ হচ্ছে। সরকারি জবের ব্যাপরটা ১০০% চেষ্টা, ৫০০% ধৈর্য্য আর ১০০০% ভাগ্য বলে মনে হয় এখন। দ্রুত বর্ধনশীল আমাদের অর্থনীতিতে কর্পোরেট বডির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কর্পোরেট সেক্রেটারি, কর্পোরেট গভার্নেন্স, গুড গভার্নেন্স, ট্যাক্সেশন এসব এখন স্বতন্ত্র পেশা ও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা বাণিজ্য বিভাগ, অর্থনীতি, আইন, ইংরেজি প্রভৃতিতে স্নাতক করেন তারা আইসিএসবি’র প্রফেশনাল শিক্ষার মাধ্যমে কর্মজীবনের দ্রুত উন্নয়ন ঘটাতে পারেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস করি।

কর্পোরেট সংবাদ: আপনার প্রিয় শখ সম্পর্কে জানতে চাই।
আলীম খান: প্রিয় শখ ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি ও বই কেনা। দেশের ৪০/৪২ টা জেলা ঘুরেছি, দেশের বাইরে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ আর ভারত। সময় পেলে ছবি তুলি এবং লেখালেখি। ছোটখাটো একটা ব্যক্তিগত পাঠাগার রয়েছে গ্রামের বাড়িতে। একাডেমিক বইয়ের বাইরে বেশি বই পড়া হয়নি। তবে বই কেনার একটা নেশা আছে। যতদূর মনে পড়ে, ৩/৪বার খাবারের টাকা দিয়ে মানে না খেয়ে থেকে বই কিনেছিলাম। কারণ একটাই- বই পছন্দ হয়েছিল।

কর্পোরেট সংবাদ: ভবিষ্যত পরিকল্পনা।
আলীম খান: সিএস এর পর আমি আইটিপি এবং পিজিডিএইচআরএম সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ইন গভার্নেন্স স্টাডিজ ফাইনাল দিচ্ছি এবং এলএলবি ফাইনাল দিব। সব মিলে দক্ষতার সাথে কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল ওয়ার্ক, এইচআর এন্ড এডমিন এর ফোকাল পারসন হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই।

কর্পোরেট সংবাদ: কর্পোরেট সংবাদের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
আলীম খান: আপনাকেও ধন্যবাদ। সেই সাথে কর্পোরেট সংবাদের পাঠকদের।

মো: আব্দুল আলীম খান এসিএস

আরো পড়ুন: আইসিএসবি’র মুল লক্ষ্য হল দক্ষ চাটার্ড সেক্রেটারি তৈরি করা: সাহিনুর কবির

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ