পাকিস্তান পর্বে পরাধীন বাঙালির জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকেই জন্ম আওয়ামী লীগের। এই দলের নেতৃত্বেই দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, ৬৯ বছরে পা দেয়া আওয়ামী লীগ এখনো মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রধান আশ্রয়স্থল।
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান যেভাবে ভাগ হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি। বাংলা ভাষাভাষীদের নিয়ে আলাদা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্নের ধুলিস্যাৎ হয় পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে। পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনে পূর্ববাংলা আবার পরিণত হয় উপনিবেশে।
এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল অংশ বাঙালির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগঠিত হতে শুরু করে।১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজগার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।
প্রথম সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। আর যুগ্ম সম্পাদক হন তুখোর তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠা সংগঠনটিকে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়।
সভাপতি থাকেন ভাসানী। সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দল ত্যাগ করে আলাদা দল গঠন করেন ভাসানী। নতুন সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান শেখ মুজিব। সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ। পরে এই নেতৃত্বের অধীনেই হয় শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৮১-তে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। তার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াইসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর বিচার হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীরাও এসেছে বিচারের আওতায়। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস অবিচ্ছেদ্য বলছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা।