চোখের সামনে স্বপ্ন ভেসে গেছে হাওরবাসী। ধান গোলায় তোলার ঠিক আগ মূহুর্তে বৃষ্টির বানে তলিয়ে গেছে গোটা হাওর অঞ্চল। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তার ছাপ সম্বল হারানো এ সকল মানুষের চোখে মুখে। সেখানে চলছে কেবলই হাহাকার। হাওরবাসীর ধান, মাছসহ তাদের জীবন-জীবিকার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। সর্বস্ব হারানো মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
হাওর অধ্যুষিত সিলেট বিভাগের চারটি জেলা এবং নেত্রকোনো ও কিশোরগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলে ১৪২টি হাওরের সিংহভাগ ফসল তলিয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দশ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া জীববৈচিত্র্য পড়েছে চরম হুমকির মুখে। হাওর অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের স্বপ্নের বোরো ফসলের ওপর অমানিশা নেমে আসায় এখন দুই চোখে শুধুই আঁধার দেখছেন তারা। হাওরাঞ্চলে যে বিপর্যয় ঘটেছে এর বিরূপ ধাক্কা সঙ্গতই লাগবে জাতীয় অর্থনীতিতেও। কারণ আমাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির এই দেশে মাঠের ফসল মূল্যবান সম্পদ।
কিন্তু কেন এই বিপর্যয়? প্রতিবছর এ সকল হাওরের বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিমাণে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু যাদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে দেয়া হয় বাঁধ নির্মাণের জন্য, বাস্তবিক অর্থে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। বাঁধের মেরামত হয় লোক দেখানো। সংসদ সদস্য থেকে ইউপি সদস্য প্রতিস্তরের জনপ্রতিনিধিরা এই ভাগ বাটোয়ারার অংশিদার হয়। বিষয়গুলো গুরুত্বের আমলে নিলে কিংবা বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ব্যয় হলো কী না, তা মনিটরিং করলে হয়তো এ মানবিক বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হতো। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি সম্পদের বিনাশ যাদের কারণে ঘটেছে তারা কোনোভাবেই পার পেতে পারে না। তাদের গাফিলতি-উদাসীনতা-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার কঠোর প্রতিকার জরুরি। হাওরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সরকারি তরফে ত্রাণসহ অন্য সবরকম সহযোগিতার কথা বলা হলেও হাওরবাসীর মধ্যে যাতে সেটা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। আর যদি এমন হয় যে, হাওরের বাঁধের টাকা যাদের পকেটে তারাই আবার ত্রাণের কর্তাব্যক্তি সেজেছেন, তাহলে বানভাসি মানুষের মুখে হাসি ফোটার বদলে দুর্নীতিবাজরা দ্বিতীয় দফা পকেট ভারি করার সুযোগ পেয়ে যাবে-তাতে কোন সন্দেহ থাকবে না।
এরই মাঝে শুরু হয়েছে বানভাসি মানুষদের রাজনীতির নোংরা কাঁদা ছোড়াছুড়ি- যা অত্যন্ত দু:খজনক। জাতীয় দুর্যোগ মনে করে সরকারের পাশাপাশি সকল ব্যক্তি রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্দ্ধে উঠে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি হাওরের বাঁধ নির্মাণের জন্য যারা কাজ করেছিল যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো। যাতে করে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনার পুনারাবৃতি না ঘটে।