নতুন কৌশলে আবারও সক্রিয় হচ্ছে উগ্রপন্থি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরপর বেশ কয়েকটি ঘটনা থেকে তার ইঙ্গিত মিলছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সম্প্রতি গ্রেফতার একাধিক জঙ্গি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, নতুনভাবে দল গোছানোর চেষ্টা করছে তারা। সর্বশেষ সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা সরঞ্জাম, বিভিন্ন আলামত ও হামলার ধরন থেকে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন কৌশল নিয়ে এবার মাঠে নেমেছে জঙ্গিরা। আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও বড় ধরনের বোমা পাওয়া গেছে এ আস্তানায়। জঙ্গি আস্তানা থেকে এর আগে বিভিন্ন সময় যে ধরনের বোমা পাওয়া গেছে, সেগুলোর তুলনায় বর্তমানে পাওয়া বোমার আকার ৫-৬ গুণ বড়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনসচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত না রাখলে জঙ্গি তৎপরতা আরও বেড়ে যেতে পারে।
গত বছর হলি আর্টিসান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর বেশ কয়েক মাস জঙ্গিদের দৃশ্যমান তৎপরতা ছিল না। গতকাল উত্তরায় র্যাব ক্যাম্পে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার অপচেষ্টা, টঙ্গীতে হরকাতুল জিহাদ অব বাংলাদেশের (হুজিবি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা, কুমিল্লায় শক্তিশালী বোমাসহ নব্য জেএমবির দুই সদস্য গ্রেফতার ও সীতাকুণ্ডে দুটি আস্তানায় অভিযান চালানোর পর আত্মঘাতী নারী জঙ্গিসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনা, গত রাতে একটি র্যাবের চৌকিতে হামলার চেষ্টা প্রমাণ করে জঙ্গিরা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক ঘটনায় মনে হচ্ছে, জঙ্গিরা পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ঘাঁটিগুলো ঢাকার বাইরে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে হামলা করার চেষ্টা চলছে। হামলার নতুন ধরন থেকে মনে হচ্ছে তাদের কেউ নির্দেশ দিয়েছে, আত্মহননই জিহাদের সঠিক পথ। এই ভুল নির্দেশনায় চালিত হচ্ছে তারা। সামগ্রিক বিবেচনায় জঙ্গিরা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনস্তাত্তি্বকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। হয়তো তাই তাদের ভাষায় কিছু ‘সার্থক হামলা’ চালিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর মাধ্যমে যেভাবে নব্য জেএমবি নতুন করে তৎপর হয়েছিল, একইভাবে নতুন এক ব্যক্তিকে সামনে রেখে তারা আবারও তৎপর হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। গত বছরের শেষ দিকে উত্তরার সূর্য ভিলায় যে ধরনের বোমা পাওয়া গেছে, সে তুলনায় সীতাকুণ্ড ও র্যাবের ক্যাম্পে বিস্ফোরিত বোমার ধ্বংসক্ষমতা কয়েক গুণ বেশি। কোনো না কোনোভাবে জঙ্গিদের হাতে অনেক অর্থ যাচ্ছে, যা দিয়ে তারা বোমা তৈরির সরঞ্জাম কিনছে।
এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ‘জঙ্গিরা আবারও হয়তো কোনো না কোনোভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছে। অনেক দিন ধরে যারা পলাতক ছিল, তারাও নতুনভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তাদের কার্যক্রম রুখে দেওয়া হয়েছে।’
একদিকে, প্রশাসন থেকে জঙ্গি দমনে সফলতার দাবি করছে, অন্যদিকে নতুন নতুন কৌশলে জঙ্গিরা দেশের শান্তি বিনষ্টে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে বর্তমান অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ জননিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। ঘটনা ঘটার পর সফলভাবে হয়ত তাৎক্ষণিকভাবে দমন করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার এদের সমুলে বিনাস করা। অর্থের যোগানদাতা, আশ্রয়দাতাসহ সকল সহযোগিদের দ্রুততার সাথে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, যাতে করে অর্থের অভাবে আর কোনভাবেই নিজেদের সংঘঠিত করতে না পারে। এছাড়া দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার পাশাপাশি প্রয়োজন দলমতের উর্দ্ধে উঠে সকল রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।