২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রাকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন প্রাণ হারায়। বেপরোয়া গতিতে আসতে থাকা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাস তাদের সকলের প্রাণ কেড়ে নেয়। এ নিয়ে মামলাও হয়। অবশেষে সে মামলার রায় দেয়া হল। রায়ে সেই বেপরোয়া বাস চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ রায়ে নিহতের স্বজনেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। আমরাও এ রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সাথে সকল সড়ক দুর্ঘটনার বিচার হবার দাবিও জানাচ্ছি।
বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারান মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় জনসাধারণের জীবনও আজ এক দিয়ে হুমকির মুখে রয়েছে। এ রকম একটি সময়ে এ রায় কিছুটা হলেও আমাদের স্বস্তি দেয়। শুধু তারেক মাসুদ বা মিশুক মুনীর নয়; দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি ঘটছে সেসবেরও বিচার হওয়া দরকার।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রায় ২০ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। আহত হয়েছে আরো প্রায় ১৫ হাজার মানুষ, যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে এমনই পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে যে এর জন্য বিশেষ বাহিনীও গঠনের দাবি জানিয়েছে কেউ কেউ। তাদের দাবি যে অমূলক তা কিন্তু নয়। সড়ক দুর্ঘটনার এ চিত্র দেখে এ রকম দাবির যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে।
অবৈধ চালক ও লাইসেন্সের সহজলভ্যতা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয় । অনেকেই কোন রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই লাইসেন্স ছাড়াই যানবাহন চালাচ্ছে। এসব বিষয়গুলোর দিকে নজরদারির ব্যবস্থাসহ কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মত দ্বিতীয় কাউকে হয়তো বা আর কোনদিন জাতি খুঁজে পাবে না। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষসহ আর কোন মেধাবীদের অকালে হারিয়ে যেতে আমরা দেখতে চাই না। এর জন্য সকল সড়ক দুর্ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে ট্রাফিক আইনের কঠোরতা ও যথাযথ প্রয়োগ হওয়া দরকার। দেশের সকলের জন্য সড়ক পথ হোক নিরাপদ।