October 7, 2024 - 10:23 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসম্পাদকীয়প্রবাসীদের মৃত্যুর হাররোধে প্রয়োজন কার্যকরি পদক্ষেপ

প্রবাসীদের মৃত্যুর হাররোধে প্রয়োজন কার্যকরি পদক্ষেপ

spot_img

দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। দেশে উল্লেখযোগ্য রেমিটেন্স আসে তাদের পাঠানো অর্থে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে। তাদের অনেককেই কাজ করতে যেয়ে দেশে ফিরে লাশ হয়ে। যারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে তাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছে। বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, গত বছরেই অর্থাৎ, ২০১৬ সালেই প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যু হয়েছে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে উল্লেখ রয়েছে, ২০১৬ সালে মোট ২ হাজার ৯৮৫ জনের লাশ এসেছে। ডিসেম্বরেই এসেছে ২৬৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশিদের লাশ। এ ছাড়াও একই বছরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৪২১ জনের এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৭৫ জন প্রবাসীর লাশ এসেছে। সব মিলিয়ে ২০১৬ সালে এসেছে ৩ হাজার ৪৮১ জন প্রবাসীর লাশ। ২০১২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৭৮ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৭৬ জন, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৩৩৫ জন এবং ২০১৫ সালে ছিল ৩ হাজার ৩০৭ জন। আর ২০০৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এসেছে ২৯ হাজার ৯৫৮ জন প্রবাসীর লাশ। বিগত অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের লাশ দেশে এসেছে। আর বিদেশে দাফন হয়েছে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের, যার হিসাব জানা নেই প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।

অধিকাংশ মৃত্যুর কারণও আকস্মিক হিসেবে বলা হচ্ছে। তবে এদের অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। আর দুর্ঘটনাতেও মারা যাচ্ছে অনেকেই। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, সহায় সম্বল বিক্রি করে কিংবা ধার করা বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে অনেক বাংলাদেশি বিদেশে গিয়ে সে অর্থ তুলতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করছে। অন্যদিকে, বিরূপ আহাওয়া ও স্থানীয় মালিকদের অত্যাচারেও মারা যাচ্ছে কেউ কেউ। কারণ, এ পর্যন্ত যতজন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশি। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, মোট মৃত্যুর শতকরা ৬২ শতাংশই হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়াতেও অনেক বাংলাদেশি মারা যান। মধ্যপ্রাচ্যের বিরূপ আবহাওয়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে অনেক বাংলাদেশির প্রায় হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়ে থাকে। এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে কোন কোন জায়গায় স্থানীয় মালিকদের অযথাই শ্রমিকদের উপর নির্যাতন করার খবর আসে। তাই, সব মিলিয়ে যে পরিমাণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যু হয়েছে তা কোনভাবেই স্বাভাবিক বলা যায় না।

পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্য জায়গা-জমি বিক্রি করে কিংবা ধার-দেনা করে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে এভাবে মৃত্যুবরণ করাটা আসলেই অনেক বেশি দু:খজনক। তাদের পরিশ্রমের কারণে শুধু তাদের পরিবার নয়; দেশের অর্থনীতিও সচল থাকে। তাদের প্রতি অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব আছে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে কাজের জন্য যায় তাদের অনেকেই ভাল বাসস্থান পায় না। গাদাগাদি করে একটি রুমে অনেকজন মিলে থাকেন। ফলে, এ রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে বিধায় তাদের অনেকেই বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তাই, তাদের বাসস্থানের বিষয়টির দিকে একটু নজর দেয়া দরকার। আর এ ব্যাপারে সরকারকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, যারা বিদেশে কাজের জন্য যায়, বিশেষ করে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যায়, তাদের একটি বড় অংশই যায় সরকারিভাবে। এখন তাদের জন্য একটি ভাল বাসস্থানের ব্যাপারটি সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে সরকার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকারের সাথে আলোচনা করে একটি ব্যবস্থা করতে পারে। তবে সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি পর্যায় থেকেও ব্যবস্থা গৃহীত হওয়া দরকার। এ ছাড়াও সেসব প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অন্যান্য আনুসঙ্গিক প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা স্থানীয় মালিকদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকারের উপর চাপ দিতে হবে। এ ব্যাপারে প্রবাসী শ্রমিকদের উপর বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা করা কিংবা বিশেষ কোন প্রতিনিধি দল পাঠানো যেতে পারে, যারা সেখানকার কর্মরত বাংলাদেশিদের মানবাধিকারের বিষয়টির দিকে নজর রাখবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে কি কি স্বাস্থ্য সমস্যা ও ঝুঁকি থাকে সে ব্যাপারেও সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের সচেতন করা দরকার। প্রবাসী সকলকেই মনে রাখা দরকার, যে অযথা পরিশ্রম করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু হলে তাদের পরিবারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। তাই, পরিবারের বিষয়টির কথা মাথায় রেখে অন্তত এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

মানুষের জন্মই হয় মৃত্যুর জন্য। তবুও কষ্টে, নির্যাতনে বা অসচেতনতার কারণে মানুষের মৃত্যু অনেক বেশি বেদনাদায়ক। প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকরি উদ্যোগ নিবে-এটাই ভুক্তভোগীদের প্রত্যাশা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ