রাজধানীর দক্ষিণ খানের আশকোনার পূর্বপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় ‘রিপল ২৪’ নামে পুলিশ অভিযান চালায়। এতে নিহত হয় দুই জন এবং আত্মসমর্পণ করে চার জঙ্গি। আত্মসমর্পণের সময় এক নারী ও এক কিশোর জঙ্গি নিজেদের কাছে থাকা গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতীর পথ বেছে নেয়। প্রায় ১৭ ঘন্টা ধরে এ অভিযানটি চলে। অভিযান শেষ হলেও যেসব তথ্য বের হয়ে আসে তা অত্যন্ত উদ্বেগের।
জঙ্গিবাদ নামক অপরাধে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আগেই জানা গিয়েছিল। এমনকি মেডিকেল কলেজের পড়–য়া ছাত্রীদেরও সম্পৃক্ততারও তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু এবারে দু:খজনক বিষয় হচ্ছে, জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত নারীরা তাদের সন্তানদেরকেও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে। নিজের সন্তানকেও তারা এ রকম সহিংস হতে বাধ্য করছেন। এর ফলে জঙ্গিবাদ অপরাধটির ভয়াবহতা কতখানি তা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যারা এসব পথ বেছে নিচ্ছে তাদের সহিংসতা যে সবচেয়ে ভয়ংকর হতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যারা এই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে তারা নিজেরাও জানে না যে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সাধারণ মুসলমানদের। আজ সারা বিশ্বেই সাধারণ মুসলমানদের কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। এদের কারণে বিশ্বের অনেক নিরীহ মুসলমানদের আজ অযথা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আর এরকম নিজ সন্তানদের জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করা দেখে অবিশ্বাসের মাত্রা সামনে আরো বাড়বে। এদের সংখ্যা সমগ্র মুসলমান জনগোষ্ঠীর তুলনায় কম হলেও এরা এত বেশি ভয়ংকর ও হিং¯্র যে এদের যেকোন হামলায় ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আজ মুসলিম, অমুসলিম কোন দেশই এই জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত নয়। ইউরোপের অনেক শক্তিশালী উন্নত দেশগুলোও আজ জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটছে। এটি একটি আজ বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আর তা হয়েছেই এদের এ রকম হিং¯্র ও বর্বরতার কারণে।
অপারেশন রিপল ২৪ সফল ভাবে সম্পন্ন হলেও সামনে এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। জঙ্গিবাদ যেভাবে বিস্তৃত হয়েছে তা রাতারাতি নির্মুল করাও সম্ভব নয়। তাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযান আরো অব্যাহত রাখলে তা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে। জঙ্গিবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের দ্বারা অনেকেই জঙ্গিবাদের দিকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। সেজন্য নতুন করে কেউ যাতে জঙ্গিবাদের দিকে পা না বাড়ায় সেজন্য ইন্টারনেটে যেসব জঙ্গিবাদী বিষয়াদি রয়েছে সেসব বন্ধ করা এবং যারা এর নেপথ্যে রয়েছে যারা তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। দেশে তরুণ সমাজের একটি অংশ এখন ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। আর তাদের অনেকেই ইন্টারনেটে জঙ্গিবাদী প্রচারণা দেখে সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। কোনভাবেই যেন আর কেউ এ পথে না আসে সেজন্য এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়াও দেশের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
অবশ্যই আশকোনার সেসব জঙ্গি অনেক বেশি বিপদজনক ছিল। এদের দ্বারা হয়তো বা ঘটে যেতে পারতো বড় ধরনের কোন হামলা। পুলিশের অভিযানের ফলে তা আর হয়নি। তাই আমরা চাই, জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকুক। হলি আর্টিজান কিংবা শোলাকিয়ার মত কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক তা আমরা কখনই চাই না।