নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৩৪১ যানবাহন দুর্ঘটনায় ৩৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬২০ জন মানুষ। এর মধ্যে শুধু সড়ক-মহাসড়কে ৩০৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২৮ জন আর আহত হয়েছে ৫৬৫ জন। উল্লিখিত সময়ে রেলপথে ২৭টি ঘটনায় ২২ জন নিহত ও৫৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ২২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ মে) তোপখানা রোডের শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিবেদন প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৫ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময় ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৭ জন নিহত, ১২০ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ, নিহতের ৫১ শতাংশ এবং আহত ২১ শতাংশ। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৮৮ জন চালক, ১৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪২ জন পথচারী, ৪৮০ জন শিশু ১৭ জন শিক্ষার্থী, ১ জন সাংবাদিক, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৪ জন শিক্ষক, ৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৬ জন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।
তিনি আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি নমুনা রিপোর্ট বলা যায়। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে তা সংবাদমাধ্যমে আসে না। তাই এসব দুর্ঘটনার হিসাব রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এবারের ঈদে শুধুমাত্র ঈদের দিনে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর সময় দুর্ঘটনায় ২১৬ জন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৬ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। ঈদের দ্বিতীয় দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০৫ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। কেবল পঙ্গু হাসপাতালে এই দুই দিনে ভর্তি রোগীর সমপরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনার খবরও সংবাদপত্রে আসেনি। ফলে এসব দুর্ঘটনার ভয়াবহতার খবর আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরতেও পারিনি।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। এসব সড়কে মানসম্মত বাসের অভাবে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইকের মতো ছোট পরিবহন অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। তিনি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানি বন্ধের পাশাপাশি গণপরিবহনকে বিকশিত করার দাবি জানান।
২০২২ সালের ঈদুল ফিতরে যাতায়াতের সাথে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৮ দশমিক ২ শতাংশ, প্রাণহানী ২১ দশমিক ১ শতাংশ, আহত ৩০ শতাংশ কমেছে।