৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ জাতির ছিল সাহসী ভূমিকা, ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ, ছিল আত্মত্যাগ।
সকল আত্মৎসর্গকারীদের ‘শহীদ’ হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। “মাতৃভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং অন্যান্য আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সকলকে ‘শহীদ’ বলে সম্বোধন করা হয়। অথচ আজ পর্যন্ত আমরা শহীদদের শ্রেণিবিন্যাস করতে পারিনি। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে জীবন দানকারীদের ‘ভাষা শহীদ’ হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন শহীদ পরিবারের সন্তানেরা।
আরও পড়ুন : ভাষা শহীদ শফিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের অজানা গল্প
সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রত্যেকের নামে একটি করে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কয়েকজনের নামে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা হলেও এখন পর্যন্ত ভাষা শহীদ শফিউর রহমানের নামে কোন লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারি মহলে যোগাযোগ করা হলেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যে সকল শহীদদের নামে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, তাঁদের নামে লাইব্রেরী করা হোক-সেটাই শহীদ পরিবারের সন্তানদের প্রত্যাশা। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ভাষা শহীদদের নামে তেমন কোন বইও চোখে পড়ে না।
আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি। আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস’ হিসেবে। অথচ যাঁদের রক্তের উপর আজ শহীদ মিনার, একুশের বইমেলা, আর এই মেলায় তাঁদের তথ্য সম্বলিত বই প্রকাশিত না হওয়া দু:খজনক। বাংলা একাডেমীতে কয়েকজন শহীদের প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে। কিন্তু এ দিয়ে কি আর ইতিহাস জানা যায়। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কীভাবে জানাবো বা শিখাবো আজকের এই মেলার উৎস কোত্থেকে, শহীদ মিনার স্থাপনের ইতিহাস, যাঁদের রক্তের বিনিময়ে এ অর্জন তাঁদের সম্পর্কে।
বর্তমানে যেভাবে বাংলাকে ‘বাংলিশ’ করে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতেও করে এ দিবসের মর্যাদা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। দেশের অভিজাত স্কুলগুলোতে বাংলাকে অবহেলা করা হচ্ছে অথচ সমাজ তথা সরকার নির্বীকার। টিভি চ্যানেল আর এফএম রেডিওগুলোর উপস্থাপনা দেখে শুনে বোঝা মুশকিল তারা বাংলা না কি ইংরেজি বলছে। বাংলার প্রতি অবহেলার কারণে বর্তমান প্রজন্ম থেকে কবি, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক, গল্পকার, ছড়াকার খুব একটা জন্ম নিচ্ছে না। প্রবীণ যে সকল কবি সাহিত্যিক মারা যাচ্ছেন তাঁদের শূণ্যস্থান পূরণ হচ্ছে না
বায়ান্নতে যাঁরা রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন- তাঁদের সে স্বপ্ন পূরণ হোক, পরিবারের সদস্যদের তথা জাতি হিসেবে আমাদের সবার সেইটাই প্রত্যাশা।