ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের মধ্যে এখন অনেক ক্ষেত্রে ব্যবধান দেখা যায়। বিশেষ করে রাস্তাঘাট উন্নয়ন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর দক্ষিণের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু একটা ক্ষেত্রে উভয় সিটি কর্পোরেশনের মিল আছে, আর তা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা পুরো ঢাকাতে সমানতালে হচ্ছে। মাঝারি বা একটু ভারি বৃষ্টি হলেই প্রধান প্রধান সড়ক, গলিপথ এবং আশপাশের এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা দিচ্ছে যানজট। যদিও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান মিডিয়াকে বলেছেন ঢাকায় জলজট আছে, কিন্তু জলাবদ্ধতা নেই। কিন্তু বাস্তবতা একথা বলছে না। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকায় যে, বৃষ্টি হয়, পরদিন বেলা ১১টায় মিরপুর রোডের ২৭ এর সংযোগস্থলে দেখা যায় কোমর পানি। মঙ্গলবার মাত্র ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টিতে হয়। ফলে রাজধানীবাসী ভয়াবহ যানজটের খপ্পরে পড়ে। ঢাকার জলজট বা জলাবদ্ধতার কোন উন্নতির সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। এক সংস্থা আর এক সংস্থার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। এর জন্য একটা সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার দিনে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার। অতীতে ৭০/৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও ঢাকা এতোটা অচল হয়নি। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার, নাজিরাবাজার, কাজী আলাউদ্দিন রোড, মালিবাগ শান্তিনগর, রাজারবাগ, দিলকুশা, ফকিরাপুল, পল্টনে হাঁটুপানি হয়ে যায়।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তরের আওতাধীন, কাওরানবাজার, এফডিসি এলাকা গ্রিনরোড মিরপুর, কাউলা, খিলক্ষেত প্রভৃতি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতা এমন একটা সমস্যা যা শুধু উত্তর নিরসন করতে পারবে না, দক্ষিণও একা নিরসন করতে পারবে না। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক মিডিয়াকে বলেছেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা বিপ্লব প্রয়োজন। পানি নামবে যে খাল দিয়ে ওই সব খাল দখল হয়ে গেছে। খাল ভরাট করে ৪/৫ তলা ভবন হয়েছে। পানি যাবে কি ভাবে? এর জন্য সিটি কর্পোরেশন দায়ী নয়। কারণ খালের মালিক জেলা প্রশাসন, আর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ঢাকা ওয়াসা। এই সব খাল রক্ষায় গত ২৫ বছর তারা কি করেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হোক। ওয়াসার এমডি, তাসকিন এ খান বলেছেন ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য একটা মাস্টার প্লান তৈরি হয়ে আছে। এই ড্রেনেজ ব্যবস্থার সাথে ৭টি সংস্থা জড়িত। এগুলোকে একটি সংস্থা অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনা উচিত। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যদি ঢাকায় একটানা ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি হয় তাহলে ঢাকায় ব্যাপক পরিবশ বিপর্যয় দেখা দেবে। নিম্নাঞ্চলের মানুষ পড়বে চরম দুর্ভোগে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ এই ৫টি সংস্থা ঢাকার পানি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। এগুলোর মধ্যে একটা সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, আর এই সমন্বিত উদ্যোগে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে।
ঢাকার জলাবদ্ধতা শুধু ঢাকার সমস্যা নয়, এটা একটা জাতীয় সমস্যা। কোন দেশের রাজধানী অচল হয়ে গেলে দেশই অচল হয়ে যায়। আমরা মেয়র আনিসুল হকের সাথে একমত। একটা বিপ্লব প্রয়োজন। ৫তলা ভবন থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নিয়ে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলতে হবে। শক্তিশালী এসেকে ভেটর ব্যবহার করে রাতা-রাতি খালগুলোকে আগের জায়গায় নিতে হবে। এটা করতে গেলে হয়তো কিছু প্রভাবশালী বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, কিন্তু ঢাকার ২ কোটি অধিবাসীর সমর্থন পাবে সরকার। এটা করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই।