মো: মিজানুর রহমান, এফসিএস : সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত কোম্পানিসমূহের এজিএম ও ইজিএম হাইব্রিড পদ্ধতিতে করার নির্দেশনা জারি করেছে।
গত ১০ মার্চ ২০২১ তারিখে বিএসইসি কর্তৃক দেওয়া এ নির্দেশনাটি সময়োপযোগী এবং খুবই অপরিহার্য ছিল। কারন এজিএম পার্টির দৌরাত্বে অধিকাংশ লিস্টেড কোম্পানির এজিএম ও ইজিএম করাটা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিল। যদিও হাইব্রিড পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে তালিকাভূক্ত কোম্পানিকে বাড়তি খরচের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তার পরও কোম্পানির কর্তাব্যাক্তিদের স্বস্তি এ কারনে যে, বর্তমান ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এজিএম পার্টির খারাপ আচরণের শিকার হতে হচ্ছে না। অবশ্য এজিএম এর খরচ বিশ্লেষণে দেখা গেছে এজিএম পার্টি ম্যানেজমেন্ট খাতে কোম্পানিগুলো যে অর্থ ব্যয় করত এখন তুলনামুলকভাবে তার অর্ধেক খরচেই সুষ্ঠভাবে এজিএম সম্পন্ন করতে পারছে।
এজিএম ও ইজিএম এ শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য বিএসইসি হাইব্রিড এবং ভার্চুয়াল উভয় মিটিংয়েই থার্ড পার্টি আইটি ফার্ম কর্তৃক অনলাইন সার্ভিস নেওয়া কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। আবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার দ্বারা এজিএম ও ইজিএম এর ইলেকশন সংক্রান্ত ডিটেইল ইনফরমেশন ও ইলেকশন প্রসেসসহ ভোটিং রেজাল্ট স্ক্রুটিনাইজ করে প্র্যাকটিসিং চার্টার্ড একাউন্ট (সিএ) ও চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) ফার্ম দ্বারা রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। যা এজিএম ও ইজিএম পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিএসইসিকে কোম্পানি কর্তৃক রিপোর্ট দাখিলের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
বিএসইসির এই নির্দেশনার আলোকে গত ২৯ এপ্রিল ২০২১ সকাল ১১ টায় হাইব্রিড এবং ভার্চুয়াল এজিএম ও ইজিএম বাস্তবায়নে বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালনে ডিএসই ও বিএসইসির যৌথ উদ্যোগে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে আমি বিএসইসি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম যে, এজিএম ও ইজিএম সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকান্ড তথা ইলেকশন প্রসেস ও ডিটেইল রিকায়ার্ড ইনফরমেশন এবং ফেয়ার ভোটিং পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করছে চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) প্রফেশনের প্র্যাকটিসিং সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে তো একাউন্টিং বা সিএ প্রফেশনের কোন এক্সপারটাইজ নেই। সুতরাং স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে শুধু প্র্যাকটিসিং চাটার্ড সেক্রেটারি (সিএস) ফার্মকে না রেখে প্র্যাকটিসিং সিএ ফার্মকে স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কেন কাজ করার সুযোগ দেয়া হলো ? এটাতো একাউন্টিং প্রফেশনের কাজ না, চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশনের কাজ কেন সিএ প্রফেশন করবে ?
বিএসইসি কর্তৃপক্ষ জবাবে আমাকে বললেন, ‘‘আপনার প্রম্নটি খুবই যৌক্তিক কিন্তু কেন সিএ প্র্যাকটিসিং ফার্মদের স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে আমি, এ ফোরামে কোন উত্তর দিতে চাই না। এটি কমিশনের বিষয়। ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) চাইলেই এ বিষয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে কমিশন বরাবর প্রপোজাল দিতে পারে। তখন বিষয়টি নিয়ে কমিশন ভেবে দেখবে’’।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল ‘‘ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের ক্ষেত্রে বিএসইসি কর্তৃক ৩৮টি সিএ ফার্মের সমন্বয়ে অডিটরস প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন প্যানেল রাখা হয়নি ? এক্ষেত্রে যদি প্যানেল করা না হয় তাহলে যে উদ্দেশ্যে কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সে বিষয়টি কতটুকু বাস্তবায়ন হবে’’?
উত্তরে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালেন, বিষয়টি যেহেতু নতুন সেকারনে কোম্পানির খরচ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা এখনও কর্পোরেট গর্ভনেন্স সার্টিফিকেট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজারদের ক্ষেত্রে কোন প্যানেল করিনি। তবে এ বিষয়টি কমিশনের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো- এজিএম ও ইজিএমে অনলাইনে সাপোর্টের জন্য যেসব থার্ড পার্টি আইটি ফার্ম বাজারে আছে তাদের সংখ্যা হাতে গোনা মাত্র ৪/৫টি। তারা কি স্বল্প মূল্যে বা কম খরচে থার্ড পার্টি আইটি ফার্ম হিসেবে সাপোর্ট দিচ্ছে ? এ ক্ষেত্রে ২০২০ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল এজিএম ও ইজিএম পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কোন থার্ড পার্টি আইটি ফার্মই এক লক্ষ টাকার নীচে এজিএম ও ইজিএমে ই-ভোটিং সাপোর্ট বা অনলাইন প্লাটফর্মের সাপোর্ট দিচ্ছে না।
তাহলে কি বোঝা যাচ্ছে না যে, চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশন কর্তৃক খুবই পেশাদারিত্বের সাথে কর্পোরেট গভর্নেন্স কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার হিসেবে রিপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিএসইসি তাদের নির্দেশনায় কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বা কোন অদৃশ্য কারনে যাদের কাজ তাদের কে না দিয়ে সিএস প্রফেশনের সাথে অন্য প্রফেশনকেও কাজ করার জন্য সম্পৃক্ত করে রেখেছে।
একইভাবে কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজার রিপোর্টের ক্ষেত্রে প্যানেল না করে কোম্পানির খরচ বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিচ্ছে। অথচ প্যানেলভূক্ত কোন সিএ ফার্মকে নিয়েই তাদের কাজের ব্যাপারে কমিশনের কোন আপত্তি নেই, যেমনটি প্যানেল হওয়ার আগে ছিল।
প্রসঙ্গত, বিএসইসি কমিশনকে বলছি, সিজিসি ২০১৮ ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ক্রুটিনাইজারস নিয়োগের ক্ষেত্রে প্র্যাকটিসিং চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশনকে বাধ্যতামূলক করে কোন সংশোধনী আনা যায় কিনা। যদি সংশোধনী আনা হয় তবে কমিশনের চাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পাওয়াটাও বাস্তব রূপ নেবে। অন্যথায় সেই আগের মতই গতানুগতিক বা নামকাওয়াস্তে সব রিপোর্ট হবে বিএসইসির উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না। আর বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি আইটি ফার্ম যেমন সেটকম আইটি, ইউকাস আইটি, কম জগৎ টেকনোলজিস ও কাজলা টেকনোলজিস নামে কয়েকটি আইটি ফার্ম যদি ৩ শতাধিক কোম্পানিতে এজিএম ও ইজিএমে আইটি সাপোর্ট দিতে পারে, তাহলে মহান সংসদে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সিএস প্রফেশনের সদস্যরা কেন যৌক্তিকভাবে তাদের পেশাগত দক্ষতা নিয়ে কাজ করতে পারবে না, বিষয়টি অবশ্যই বিএসইসি ও আইসিএসবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।
লেখক: সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ ; ফেলো, আইসিএসবি ও কলামিস্ট