কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : রাজধানীর সূত্রাপুরের আশিকুর রহমান খান অপু হত্যা মামলায় রাসেল ও নওশাদ হোসেন মোল্লা রবিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এছাড়া হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া মুন্নাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ঝলককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। মুন্না জামিনে থাকায় তাকে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তাকে গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামী ও রাষ্ট্র পক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ এই রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, সরওয়ার আহমেদ ও মোশতাক আহমেদ।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৩ মে সন্ধ্যায় সূত্রাপুর থানার ৪/১ ওয়ারী হেয়ার স্ট্রিটের বাসা থেকে সন্ত্রাসীরা অ্যাডভোকেট রইস উদ্দিনের ছেলে নিহত অপুর ভাই আরিফুর রহমান খান সেতুকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মারতে মারতে স্থানীয় সিলভারডেল স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে সেতুর ভাই আশিকুর রহমান খান অপু ও আতিকুর রহমান খান বাপ্পী সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের এলাপাতাড়ি গুলি করে। এরপর তারা তিন ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে গুলি করতে করতে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন মারাত্মক আহত অবস্থায় তিনভাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক অপুকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দুই ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও তারা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। এ ঘটনায় নিহতের বোন আতিয়া খান কেয়া বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। সে অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, আসামিরা ১২ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
আলোচিত এই মামলার বিচার শেষ ২০১২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আশিকুর রহমান খান অপু হত্যা মামলায় দুই আসামিকে ফাঁসি ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মঞ্জুরুল আবেদীন রাসেল ও নওশাদ হোসেন মোল্লা রবিন। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মাহবুব আলম, মোহাম্মদ আলী মুন্না, ইফতেখার বেগ ঝলক ও বিপ্লব চন্দ্র দাস। ট্রাইব্যুনালের রায়ে আতিক আহমেদ শিপলুকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামীদের আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৭ মে বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত মঞ্জুরুল আবেদীন রাসেল ও নওশাদ হোসেন মোল্লা রবিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। আর আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের মধ্যে মুন্না ও ঝলককে খালাস দেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি দুই আসামি মাহবুব আলম ও বিপ্লব চন্দ্র দাস পলাতক থাকায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন।