স্পোর্টস ডেস্ক : আসরের প্রথম আট ম্যাচের সাতটিই হারলো যে দল, কে ভেবেছিল তারাই ঠাঁই করে নেবে আইপিএলের প্লে-অফে? অভাবনীয় সেই কাজটাই করে দেখালো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। প্রথম ধাপের শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে আজ তারা খেলতে নেমেছিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে। প্লে-অফে ওঠার লড়াই ছিল দু-দলেরই। কিন্তু সমীকরণ অনেকটা সহজ ছিল চেন্নাইয়ের। সমীকরণ ছিল এরকম- জিতলেও প্লে-অফে উঠতে পারবে না বেঙ্গালুরু, যদি না জিততে পারে অন্তত ১৮ রানের ব্যবধানে।
সে অঙ্ক কষেই কি না বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টসে জিতে ফাফ ডু প্লেসিসকে ব্যটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ। আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার বিরাট কোহলি এবং ফাফ ডু প্লেসিসের ব্যাটে চড়ে মোটামুটি ভালো শুরু পায় ব্যাঙ্গালুরু। খুব আগ্রাসী না হলেও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে রান তুলতে থাকেন কোহলি এবং ডু প্লেসি।
শুরুতে ডু প্লেসিস কিছুটা ধীরে এগোলেও সাবলীল ছিলেন কোহলি। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৪২ রান তোলে বেঙ্গালুরু। পাওয়ারপ্লের শেষে কিছুটা হাত খুলে খেলতে শুরু করেন ডু প্লেসিস। কোহলিও চলে যান ফিফটির খুব কাছে। তবে শেষমেশ ফিফটিটা আর ছোঁয়া হয়নি তার। দলের ৭৮ রানের মাথায় ভেঙে যায় বেঙ্গালুরুর উদ্বোধনী জুটি। ২৯ বলে ৪৭ রান করে বিদায় নেন কোহলি। ডু প্লেসিস অবশ্য তুলে নেন ফিফটি। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরার আগে ৩৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তিনে নামা রজত পতিদার এবং চারে নামা ক্যামেরন গ্রিন ছিলেন বেশ মারমুখি। অল্প সময়েই ক্রিজে দারুণভাবে জমে যান দুজন। তাদের ব্যাটে চড়ে বড় সংগ্রহের দিকে এগোতে থাকে বেঙ্গালুরু আর কঠিন হতে থাকে চেন্নাইয়ের প্লে-অফের সমীকরণ।
দলের ১৮৪ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ২৩ বলে ৪১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন পতিদার। শেষ দিকে ছোট দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলেন দীনেশ কার্তিক এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৬ বলে ১৪ রান করেন কার্তিক। ম্যাক্সওয়েল খেলেন ৬ বলে ১৫ রানের ইনিংস। অন্যদিকে শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ১৭ বলে ৩৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন গ্রিন। নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলা শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৮ রানের শক্তপোক্ত সংগ্রহ দাঁড়ায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। চেন্নাইয়ের হয়ে ৬১ রান খরচায় ২ উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর। এছাড়া ১টি করে উইকেট শিকার করেন মিচেল স্যান্টনার এবং তুষার দেশপান্ডে। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় চেন্নাই। ইনিংসের প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক সঙ্গে করে সাজঘরে ফেরেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়।
এদিন ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি ড্যারিল মিচেলও। ৬ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই কিউই ব্যাটসম্যান। দলীয় ১৯ রানে দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় চেন্নাই। পরবর্তী ব্যাটসম্যান আজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে ম্যাচের হাল ধরেন রাচিন রবিন্দ্র। দারুণ দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দুজন। তাদের ব্যাটে চড়ে চাঙ্গা হয় চেন্নাইয়ের ইনিংস। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৮ রান তোলে চেন্নাই। পাওয়ারপ্লে শেষেও চলেছে রাহানে-রাচিনের বীরত্ব। ক্রিজে দারুণভাবে জমে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানের কার্যকরী ব্যাটিংয়ের ফলে কক্ষপথেই ছিল চেন্নাই। দুজনের জুটি ভাঙে দলের ৮৫ রানের মাথায়।
২২ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন রাহানে। তবে রাচিন টিকে থাকেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ফিফটিও। দারুণ খেলতে থাকা রাচিন থামেন দলীয় ১১৫ রানের মাথায়। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৭ বলে ৬১ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ কিউই ব্যাটসম্যান। রাচিনের বিদায়ের পরই আসলে ব্যাকফুটে চলে যায় চেন্নাই। ১৫ বলে ৭ রান করে বিদায় নেন শিভাম দুবে। সুবিধা করতে পারেননি মিচেল স্যান্টনারও। ৪ বলে ৩ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের বলে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসের অসাধারণ এক ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ১২৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন প্রচণ্ড চাপে চেন্নাই। প্লে-অফে যেতে চেন্নাইয়ের সমীকরণ ছিল ২০১ রান করতে পারলেই চলবে, এরপর হেরে গেলেও সমস্যা নেই। তবে এই সমীকরণই বেশ জটিল হয়ে পড়তে থাকে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য। শেষ দিকে দলের হাল ধরেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। দুজনের দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে বেশ জমে উঠে ম্যাচ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ৩৫ রান আর প্লে-অফে যেতে দরকার ছিল ১৭ রান। প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান ধোনি। তবে পরের বলেই আউট। এরপর ১ বল ডট। পরের বলে সিঙ্গেল নেন শার্দুল ঠাকুর। শেষ ২ বলে দরকার ছিল ১০ রান। জাদেজা স্ট্রাইকে থাকলেও নিতে পারেননি কোনো রান। ২৭ রানের দারুণ জয়ের ফলে প্লে-অফের টিকিট কেটে ফেলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। লেখা হয়ে যায় প্রত্যাবর্তনের দারুণ এক গল্প। আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিদায় নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। বেঙ্গালুরুর হয়ে ২ উইকেট নেন যশ দয়াল। এছাড়া ১টি করে উইকেট শিকার করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ক্যামেরন গ্রিন, লকি ফার্গুসন এবং মোহাম্মদ সিরাজ।