স্পোর্টস ডেস্ক : ওপেনার তানজিদ হাসানের হাফ-সেঞ্চুরি এবং বল হাতে সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা চতুর্থ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১০ মে) সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ রানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। এই জয়ে সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। তানজিদ ৩৭ বলে ৫২ রান করেন এবং বল হাতে সাকিব ৪টি ও আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্ম দেখানো মুস্তাফিজ ৩ উইকেট নেন। এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৬৮ বলে ১০১ রানের সূচনার পর ১৯ দশমিক ৫ ওভারে ১৪৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে১৯ দশমিক ৪ ওভারে ১৩৮ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দারুন শুরু পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ওপেনার তানজিদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৭ রান তোলে টাইগাররা। এ সময় তানজিদ ২৭ বলে ৪০ এবং সৌম্য সরকারের রান ছিল ৯ বলে ৬।
নবম ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ৩৪ বল খেলা তানজিদ। অর্ধশতকের পর ব্যক্তিগত ৫১ রানে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান তিনি। কিন্তু আরও মাত্র ১ রান যোগ করে ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পেসার লুক জঙ্গির বলে আউট হন ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৭ বলে ৫২ রান করা তানজিদ।
উদ্বোধনী জুটিতে তানজিদ-সৌম্য ৬৮ বলে ১০১ রান করেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উদ্বোধনী জুটিতে তৃতীয় এবং সব মিলিয়ে সপ্তমবার শতরানের জুটি গড়লো বাংলাদেশ। তানজিদকে ফেরানোর ওভারেই সৌম্যকে সাজঘরে ফেরত পাঠান জঙ্গি। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৪ বলে ৪১ রান করেন প্রথমবার সিরিজে খেলতে নামা সৌম্য।
দলীয় ১০৮ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সৌম্য ফেরার পর ব্যাটিং ধ্বস নামে বাংলাদেশ ইনিংসে। তিন নম্বরে তাওহিদ হৃদয়কে ১২ রানে আউট করেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক স্পিনার সিকান্দার রাজা। টাইগার দলনেতা নাজমুল হোসেন শান্তকে ২ ও সাকিব আল হাসান ১ রানে বোল্ড করেন স্পিনার ব্রায়ান বেনেট।
জিম্বাবুয়ের দুই স্পিনারের পর উইকেট শিকারের মাতেন তিন পেসার রিচার্ড এনগারাভা, জঙ্গি ও ব্লেসিং মুজারাবানি। জাকের আলি ও তানজিম হাসানকে ৬ রানেই থামিয়ে দেন এনগারাভা। ২ রান করে জঙ্গির তৃতীয় শিকার হন রিশাদ হোসেন। রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হন তাসকিন আহমেদ। শেষ ব্যাটার হিসেবে মুস্তাফিজুর রহমানকে ৩ রানে শিকার করে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন মুজারাবানি।
দুই ওপেনারের ১০১ রানের দুর্দান্ত সূচনার পর ২শ রানের স্বপ্নই দেখেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯ দশমিক ৫ ওভারে ১৪৩ রানে অলআউট হলো টাইগাররা। দুই ওপেনার বাদে বাংলাদেশের শেষ নয় ব্যাটারের আটজনই দুই অংকের কোটা স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। জিম্বাবুয়ে জঙ্গি ৩টি, বেনেট ও এনগারাভা ২টি করে উইকেট নেন। ১৪৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। পেসার তাসকিনের বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে সাকিবকে ক্যাচ দেন রানের খাতা খুলতে না পারা বেনেট।
ব্যাটিংয়ে প্রমোশন নিয়ে তিন নম্বরে নেমে ৪টি চার মারেন রাজা। কিন্ত চতুর্থ ওভারে তাসকিনের বলে বোল্ড হন ১০ বলে ১৭ রান করা জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক । দ্বিতীয় উইকেটে মারুমানির সাথে ২৮ রান যোগ করেন রাজা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জিম্বাবুয়ের শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। ১৪ রান করা মারুমানিকে লেগ বিফোর আউট করেন সাকিব।
দশম ওভারে রিশাদের প্রথম বলে জোনাথন ক্যাম্পবেলের ক্যাচ ফেলেন হৃদয়। এক বল পর মাদান্দেকে ১২ রানে শিকার করেন রিশাদ। ৫৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তবে পঞ্চম উইকেটে ৩০ বলে ৩৫ রান যোগ করে জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ে রাখেন ক্যাম্পবেল ও রায়ান বার্ল।
১৯ রান করা বার্লকে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন মুস্তাফিজ। ২ বল পর জঙ্গিকে ১ রানে আউট করেন ফিজ। একই ওভারে মুস্তাফিজের জোড়া আঘাতের পর ক্যাম্পবেলকে চিন্তিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ শিবির। ১৭তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমনে এসে ক্যাম্পবেলকে বিদায় করেন ম্য সাকিব। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৭ বলে ৩১ রান করেন ক্যাম্পবেল।
দলীয় ১০৩ রানে সপ্তম উইকেট পতনের পর শেষ ২৩ বলে জয়ের জন্য ৪১ রান প্রয়োজন পড়ে জিম্বাবুয়ের। শেষ ২ ওভারে ২১ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ের। ১৯তম ওভারে ৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মুস্তাফিজ। এতে শেষ ওভারে ১৪ রানের প্রয়োজন পড়ে সফরকারীদের। শেষ ওভারে প্রথম চার বলে ৮ রান দিয়ে জিম্বাবুয়ের শেষ দুই উইকেট তুলে নেন সাকিব। ২ বল বাকী থাকতে ১৩৮ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের সাকিব ৩৫ রানে ৪টি, মুস্তাফিজ ১৯ রানে ৩টি ও তাসকিন ২০ রানে ২ উইকেট নেন। আগামীকাল ১২ মে মিরপুরে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে।