মিজানুর রহমান হেলাল : কিছু স্মৃতি এখনো মনের মধ্যে প্রভাব ফেলে। জীবন চলার পথে কত মানুষের সাথে পরিচয় হলো, চেনা জানা হলো। সব থেকে বেশি মানুষের সম্পর্কে জানার সুযোগ হয় ৫ বছর আমার সাংবাদিকতা পেশার সাথে থাকার সুবাদে। প্রত্যেকটা মানুষের মুখোশের আড়ালে যে মানুষটি রয়েছে- তা যদি মানুষ জানতো! আহা, মানব জাতি! আফসোস! কিছু জানার পরেও বলতে পারবো না?
আমি একজন আজন্ম বাম নেতার ছেলে। যে নীতি আদর্শের উপরে বিশ্বাস করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি, যে নেতাদের বিশ্বাস করে সমস্ত কিছু উজাড় করে বিলীন হলেন তিনি, ভাবলেন না পরিবারের কথা, অগাধ পৈতিক সম্পদ বিকিয়ে দিলেন! আর যিনি তার নেতা- বাম নীতিকে পুঁজি করে অগাধ সম্পত্তির মালিক হলেন। ক্ষমতার লালসায় কিঞ্চিত পরিমাণ নীতিও অবশিষ্ট রাখলেন না। নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান, বাম রাজনীতির আদলে অর্থলোপাট! সর্বপরি মিডিয়াতে আলোচনায় থাকার জন্য ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে কথাবার্তা! বাহ! বাহ! কি বিকৃত মানসিকতা। তৃণমূলে অনেক নেতাকর্মী আছে তা দেখিয়ে যে সম্পদের পাহাড় গড়লেন, তার কিঞ্চিত পরিমাণও কি ব্যয় করলেন যারা দলের জন্য প্রাণ দিলেন? এসব কেন আমার মনের মধ্যে প্রভাব ফেলে?
বাবা তখন ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ওপেন ও আন্ডারগ্রাউন্ড দুটোরই নেতা। ঘরের মধ্যে লং রাইফেল, কাটা রাইফেল, এস এম জি, একনলা ও দুনলা বন্দুক। বস্তা ভরা পিতলের গুলি। মিটিং হচ্ছে.. সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের দাবি বাস্তবায়নের। আলতা দিয়ে হাতে লেখা পোষ্টার। স্লোগান – ‘ভাত চাই কাপড় চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই’।
আমার মা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ পরিবারের মেয়ে ছিলেন। কোলের মধ্যে বাচ্চা ছেলেটাকে নিয়ে ঘরের পিড়িতে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন কত তার হিসাব নাই বা করলাম। কি লাভ হলো? সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভাত কাপড়ের অধিকার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সেটা জানি না। বাম রাজনীতির আদলে দেশে কিছু হয়েছে কি না সেটাও জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদলে দেশে অনেক কিছু হয়েছে।
আর কমরেড জালাল উদ্দিনরা এখনো স্বপ্ন দেখেন বিপ্লবের, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের বিপ্লব। আমি গর্বিত আমি কমরেড জালাল উদ্দিনের সন্তান। আর আফসোস ঐ সকল সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য, যারা পরিবারের কথা না ভেবে মুখোশধারী বাম নেতাদের জন্য জীবনের মুল্যবান সময়গুলো অপচয় করছেন।
পরিশেষে বলব, কর্মমূখী হোন ১০০ টাকা হলেও আয় করতে পারবেন। আপনার সন্তানের জন্য খাবার কিনতে পারবেন। আর না হলে আপনার পরিবারের অবস্থাও হতে পারে সোরাব ওরফে রহিম, রমজান ওরফে হায়দার অথবা মখলেসদের মতো। দুঃখ হয় সুবিধাবাদী মুখোশধারী বাম নেতাদের আসল চেহারাটা যদি সুবিধাবঞ্চিত নেতা কর্মীরা দেখতো! কিছুটা হলেও তারা তাদের নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য নিজেরাই কাজ করার চেষ্টা করতো।
লেখক: মিজানুর রহমান হেলাল
(সাংবাদিক ও ফ্রিল্যন্সার)