সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের গুলিতে ছাত্র আহত হওয়ার প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল থেকে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রাতে আহত ছাত্র আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ও পুলিশ বাদী হয়ে অবৈধ অস্ত্র আইনে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছে।
এছাড়া সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশ শিক্ষক রায়হানের কাছে থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড তাজা গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন, ২টি বিদেশি কাতানা (ছুরি), ১০টি আধুনিক বার্মিজ চাকু ও ১টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি জুলহাস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির টিম আজ সকালে সিরাজগঞ্জে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলহাস উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া তার কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আসামির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি অবৈধ। যে কারণে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পুলিশ বাদী আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ অন্যায়ভাবে আমাদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করে আসছে। সোমবার ক্লাস চলাকালে আমাদের সহপাঠীকে গুলি করে আহত করেছে। তার শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এ বিষয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি কলেজে এসে কাজ শুরু করেছে। এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা’) অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাতুব্বর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ৮ম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আরাফাত আমিন তমালকে ক্লাস চলাকালে গুলি করেন আহত করেন ওই কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন। এরপর সন্ধ্যায় তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় তার কাছে থেকে পুলিশ একটি পিস্তল উদ্ধার করে। অভিযুক্ত ডা. রায়হান শরীফ কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।
এদিকে শিক্ষক রায়হানের ফোনে প্রচুর অস্ত্রের ছবি পোস্ট রয়েছে। তার পিস্তল গুলি লাখ টাকায় কেনা বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থী ও ওই কলেজের একাধিক ব্যক্তি জানান, উগ্র মেজাজি ডা. রায়হান শরীফ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে এবং সিরাজগঞ্জ শহরের দত্তবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। তার এ উগ্র আচরণের কারণে স্ত্রীর সাথেও বিচ্ছেদ ঘটেছে। তিনি প্রতিনিয়ত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর কথাবার্তা বলে হেনস্তা করতেন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে তারা অবগতও করেছেন। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’