তিমির বনিক: স্টাফ রিপোর্টার: বিয়ের এই এ ছবিটি মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সুনামগঞ্জের জেলা কারাগারের। ৬ লাখ টাকা দেনমহরে ভিকটিম নারী দুলবী বেগমের সাথে বিয়ে হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আব্দুর রশীদের। যার পেছনের গল্পটা মোটেও মধুর নয় চরম তিক্ততা ভড়া।
জানা যায়, ২০১০ সালে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের সিরামিশ গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে দুলবী বেগমের সাথে পরিবারের অগোচরে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিয়ে হয় একই এলাকার উপজেলার নবীনগর গ্রামের মৃত ছাইম উল্লার ছেলে আব্দুর রশীদ ওরফে শহীদের। গোপনের বিয়ের এই সম্পর্ক জানাজানি হলে বিয়ের কিছুদিন পর যুক্তরাজ্যে চলে যান শহীদ। সেখানে গিয়ে দুবলীর সাথে বিয়ের সম্পর্ক অস্বীকার করেন এই যুবক। এর কিছুদিন পর একটি ছেলে সন্তানের জন্মদেন দুবলী বেগম। বিয়ে ও ছেলে সজিবের স্বীকৃতির দাবিতে ২০১১ সালে নারী শিশু আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগী নারী। কিন্তু বিয়ের কোনো আইনি তথ্যপ্রমান না থাকায় মামলায় নানা জটিলতায় পড়তে হয় দুলবী বেগমের। মামলা চলাকালীন সময়েও দেশে ফিরে বিয়ে করেন অভিযুক্ত শহীদ। দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে দুই সন্তান রয়েছেন তাঁর।
এদিকে ভুক্তভোগী নারী দুলবী বেগমের সন্তানের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় সনাক্ত হলে বিচারধীন মামলায় ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর আব্দুর রশীদ শহীদ মিয়াকে অভিযুক্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে আদালত। সম্প্রতি ভুক্তভোগী নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত যুবক আবেদন করলে এক্সিকিউটিভ ম্যাসিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ মামলা জটিলতার পর আদালতের হস্তক্ষেপে বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রীর স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি স্বজন ও সংশ্লিষ্টরা।
ভুক্তভোগী নারী দুলবী বেগম বলেন, পরিবারের অগোচরে বিয়ে হয়। পরে বিয়ের কথা জানাজানি হলে তিনি বিদেশ চলে যান। সেখানে গিয়ে সব যোগযোগ বন্ধ করে দেন। সন্তান হওয়ার পর সবকিছু অস্বীকার করেন। দীর্ঘদিন মামলা চালিয়েছি। অনেক কষ্ট করেছি। এতদিন পরে হলেও আমি আমার সন্তানের স্বীকৃতি পেয়েছি। এখন যদি সুন্দর মতো সংসার করতে পারি। তারা যেভাবে আমারে মেনে নিয়েছেন আমি আশা করি বাকি দিন কিছুটা ভালো যাবে।
ভুক্তভোগী নারীর মা সরলা বেগম বলেন, আদালতের এই রায়ে আমি খুশি। আমার মেয়েটা যাতে সুন্দরভাবে সংসার করতে পারে সেক্ষেত্রে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আমার মেয়েটা অনেক কষ্ট করছে। যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। এবার একটু শান্তিতে থাকুক।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন করতে এই বিয়ের আয়োজন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ পেলে কয়েদি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন বলে জানিয়ে জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার হুমায়ূন কবির বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করেছি। ছেলেই বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা করেছে। বিয়ের কাগজপত্র আদালতে গেলে আদালত আমাদের জামিনের নির্দেশ দিলে কয়েদির মুক্তির আর কোন বাঁধা থাকবে না।
কারাগারে বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় দুই ছেলে-মেয়ের মিষ্টিমুখসহ দুই পরিবারকে একত্র করা হয়। অতীতের খারাপ সময় ভুলে সামনের পথে মিলেমিশে থাকার প্রত্যয় করেন তারা।