বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। উক্ত মামলায় রোববার (৯ মার্চ) উচ্চ আদালতে বিএসইসি’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সাইফুর রহমানের পক্ষে আগাম জামিনের আবেদন করা হয়েছে।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া, এফসিএস তাঁর আগাম জামিনের বিষয়টি কর্পোরেট সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নিরাপত্তাকর্মী (গানম্যান) মো. আশিকুর রহমান বাদি হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
মামলা প্রসঙ্গে আশিকুর রহমান বলেন, আমি বাদি হয়ে ১৬ জনকে আসামী করে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান ছাড়াও ওই মামলায় অন্য আসামী হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম, যুগ্মপরিচালক রাশেদুল ইসলাম, উপপরিচালক বনী ইয়ামিন, উপপরিচালক আল ইসলাম, উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম, উপপরিচালক তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনি হোসেন, সহকারী পরিচালক রায়হান কবীর, সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী পরিচালক আব্দুল বাতেন, লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে এবং কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে কমিশনের নির্ধারিত সভাকক্ষে সভা চলাকালে অভিযুক্তরাসহ আরও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কমিশনের সভাকক্ষে জোর করে অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে। এরই মধ্যে পূর্ব পরিকল্পনা মতে এবং অবৈধ বাধা যারা সৃষ্টি করার জন্য আসামিরা কমিশনের মূল ফটকে তালা দেয়, সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, কমিশনের লিফট বন্ধ করে দেয় এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুরুতর জখমের প্রচেষ্টা করে।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে ও এসির রিমোট চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে এবং বিভিন্নভাবে পেশিশক্তির মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। একই সাথে তারা কমিশনের চেয়াম্যানের একান্ত সচিব (সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে লাঞ্ছিত করে। আসামিরা কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান আদেশ প্রত্যাহার এবং কমিশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কারণ দর্শানোর আদেশ প্রত্যাহার এবং গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার দাবিতে সন্ত্রাসী কায়দায় সরকারি অফিস কক্ষ ভাংচুর করে এবং সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে এবং প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে।
এজাহারে বলা হয়, বিগত দিনের পুঁজিবাজারের অনিয়ম অনুসন্ধানে বিএসইসি পুঁজিবাজারে অভিজ্ঞ পাঁচজনের সমন্বয়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির অনিয়ম সংক্রান্তে জড়িত চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। কমিশন সেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও রিপোর্টর সুপারিশের সূত্রে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তারই অংশ হিসেবে কমিশনের কয়েক জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় তাকে চাকুরি হতে অবসর দেওয়া হয়।
এদিকে আসামিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এবং সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুব-উর-রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মো. লুৎফুল কবির ও যুগ্ম পরিচালক মো. রশীদুল আলমের বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ পুঁজিবাজারে লুটপাটের সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগের তাদের পাসপোর্ট বাতিল করে দেশ ত্যাগের নিষেজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদেরকে অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন অশোভন স্লোগান, অকথ্য ভাষা ব্যবহার এবং পেশিশক্তির মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। এ ভীতিকর পরিস্থিতি প্রায় ৪ ঘণ্টা চলে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা অবরুদ্ধ থাকার খবরে এবং বিএসইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠান হওয়ায় যৌথবাহিনী বিএসইসিতে অবস্থান নিয়ে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের জিম্মি অবস্থা হতে মুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিএসইসির উপরোক্ত উশৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বর্ণিত অপরাধের মাধ্যমে পুঁজিবাজার ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।