কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না বলে ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। গত বছরের মতো এবারও সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাসপোর্ট তো আমার নাগরিক অধিকারের একটা অধিকার। আমি চোর না ডাকাত সেটা পুলিশ আলাদাভাবে বিচার করবে। আমাকে যে জন্ম সনদ দিয়েছেন সেটা তো কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে করেননি। আমাকে এনআইডি দিয়েছেন সেটাও কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে করেননি, নাগরিক হিসেবে পেয়েছি।
জন্ম সনদ নিয়ে ভোগান্তি কমানোর নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় যেন প্রতিটি নাগরিককে জন্ম সনদ প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ডিসিদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে জন্ম সনদ প্রদানের ভোগান্তি কমাতে হবে। একইভাবে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রেও ভোগান্তি কমাতে আন্তরিক হতে হবে।’
জেলা পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও উন্নয়ন করতে ডিসিদের পরিচর্যা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কীভাবে কোন জেলায় শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায়, এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে। পাসপোর্ট করতে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না, এটা সবার নাগরিক অধিকার।’
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘সরকারকে একটা টিম হতে হবে। সরকার চালাতে টিম ওয়ার্ক লাগে। টিম গঠনের জন্য সবাই একত্র হয়, তখন কার কী করণীয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা থাকে। কার কী ঘাটতি রয়েছে, সেসব বিষয় থাকে। কারণ খেলা হলো সামগ্রিক একটা জিনিস। একজনের ভুল কাজে পুরো টিম তার সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমরা এমন ভুল যেন না করি, যাতে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়। এগুলো নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।’
ড. ইউনসূ বলেন, ‘সরকার গঠনের পর ছয় মাস চলে গেল। আয়োজনের জন্য এটাকে আমরা বলছি প্রথম পর্ব। আয়োজনের সময় অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। এখন সেগুলো ঠিক করে পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত। সেই প্রস্তুতি হলো কি না বা কী কী ঘাটতি রয়েছে সেগুলো ঠিক করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই সম্মেলনে আমাকে প্রধান অতিথি বলাতে কষ্ট পেলাম। যেন আমাকে বাইরে রাখা হলো এই খেলার মাঠ থেকে। হওয়া উচিত ছিল আমি খেলার ক্যাপ্টেন। আমি অতিথি নয়, ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য দিতে চাই।’
সরকারে কাজ কী ধরনের তা হাতেগোনা মাপা জিনিস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজ একই, তবে বারে বারে একই ভঙ্গিতে আসছে। সেসব কাজ কে কীভাবে করছি, কীভাবে হলো ভালো হতো, ক্যাপ্টেনের সিগন্যালটা কীভাবে যাওয়া দরকার এগুলো নিয়ে আলোচনা।’
কো-অর্ডিনেশন নিয়ে সম্মেলনে আলোচনার পরামর্শ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের বোঝাবুঝির মধ্যে যেন গলদ না থাকে। সেখানে কী কী বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত সবার ভালো করেই জানা আছে। জেলার দায়িত্ব সামগ্রিকভাবে একজনের ওপর। তার সঙ্গে বাকিদের কো-অর্ডিনেশন করতে হয়। সেই কো-অর্ডিনেশনের কি সমস্যা, নাকি পৃথক পৃথকভাবে হবে এগুলো পরিষ্কার করে নেয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে কী করতে হবে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চেইন অব কমান্ড কীভাবে যাবে। এই নয়, আমার কাজ ছিল না, তাই মনোযোগ দেই নাই। কিন্তু এটা হতে দেয়া যাবে না। কারণ আমরা হলাম সরকার। তাই এসব দায় এড়ালে হবে না। নারী ও শিশুদের রক্ষা বিশেষ দায়িত্ব। সংখ্যালঘুদের রক্ষা মস্তবড় দায়িত্ব। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ওপর সারা দুনিয়া নজর রাখে। সরকারের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা। সামনে আমাদের যেসব কর্মসূচি নেব, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার কথা মাথায় থাকবে।’
বাজার দর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখানে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থাকতে পারে। আমার জেলার বাজারদর সবচেয়ে ভালো। আমার জেরার শান্তিশৃঙ্খলা সবচেয়ে ভালো। আমার জেলায় কোনো চাঁদাবাজি নেই। খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতায় আমি ওপরে আছি। চেষ্টায় যে পিছিয়ে না পড়ি। র্যাংকিং থাকলে নিজেদের মধ্যে আনন্দ হয়। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব আসুক।’
ডিসিদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এটাই সুযোগ নিজেকে প্রকাশ কারার, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার। গৎবাঁধা কাজ থাকবে, তবে সৃজনশীলতাও থাকতে হবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)।
জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অংশগ্রহণকারী ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা। এবারের ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মোট ৩৪টি কার্য-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। কার্য-অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে কার্য-অধিবেশন এবং সমাপনী অধিবেশন সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নবনির্মিত ভবনে হবে। এসব অধিবেশনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সভাপতিত্ব করবেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য দিক-নির্দেশনা দেবেন।
ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয়দিন সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কার্য-অধিবেশনের বাইরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জানা যায়, এদিন খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
এছাড়াও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুর্নীতি দমন কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
এছাড়াও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিষয়াদি, মন্ত্রিপরিষদ সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। পরবর্তীতে ফিডব্যাক অধিবেশন ও সম্মেলনের মূল্যায়ন এবং সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেওয়াজ থাকলেও এবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে এ বছর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সাক্ষাৎ হচ্ছে না।


