কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।। সেই সঙ্গে গুমের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণও মিলেছে। তবে ট্রাইব্যুনালে তথ্য প্রদানে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন প্রসিকিউটররা।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, গুমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। তবে ট্রাইব্যুনালে তথ্য প্রদানে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন প্রসিকিউটররা।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার মতো এমন নৃশংস ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেনি বাংলাদেশ। এ হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে একাধিক মামলাও হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। এ নিয়ে মাঠে নেমে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেছে পুরো তদন্ত সংস্থার।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) একটি মামলার শুনানি হয় ট্রাইব্যুনালে। সেখানেই উঠে আসে জুলাই- আগস্ট গণহত্যার সময় কিভাবে নির্দেশ দিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত কল রেকর্ড, ইলেকট্রনিক নানা তথ্যপ্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে, যা যাচাই-বাছাই করতে চাওয়া হয় আদালতের অনুমতি। পরে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) সহযোগিতার অনুমতি দেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়া গুম, নিখোঁজ নিয়ে প্রযুক্তিগত নানা তথ্য-উপাত্ত হাতে এসেছে প্রসিকিউশনের। সেগুলো জব্দ করতে গিয়ে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারসহ (এনটিএমসি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অসহযোগিতার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা জানান, গুমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। হত্যাকাণ্ডের আলামত গায়েব করতে সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছিল।
এদিকে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কলরেকর্ড সিআইডিতে ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, অনলাইন প্লাটফর্ম ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সময়ে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কলরেকর্ডের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে প্রথমে কোটা এবং তারপর সরকার পতনের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও অগাস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। তবে আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা নিয়ে নানা আলাপ হলেও এর প্রকৃত সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি তালিকা অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৭০৮।
সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা নির্ধারণে তালিকা তৈরির কাজ চলমান।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে জারি করেছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
আরও পড়ুন:
জনগণ মেনে নিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না: হাইকোর্ট