নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই বর্তমান ইসির মূল লক্ষ্য। এ নির্বাচনে ভোটারদের বঞ্চনা ঘোচাতে চাই। তিনি বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে কমিশন ইচ্ছাকৃত ভুল করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
রোববার (৫ জানুয়ারি) ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২৫ উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের ‘প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি)’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাজ করার সুযোগ নেই। ১৮ কোটির মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কাজ করতে গিয়ে ইচ্ছেকৃত ভুল কমিশন করবে না বলে প্রশিশ্রুতি দিচ্ছি।
আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার তথ্য সংগ্রহের এ কাজে সবার সহযোগিতা চান সিইসি। ধাপে ধাপে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর পৌনে এক লাখ লোকবলকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
তিনি আরো বলেন, “ক্রিটিক্যাল টাইমে (ক্রান্তিকালীন) নতুন সরকার ক্ষমতা নিয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, আমরাও ক্রান্তিকালীন সময়েরই একটা নির্বাচন কমিশন।
এ সময় পুরনো মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান সিইসি। সব সংস্কারের বড় সংস্কার নিজের আত্মাকে সংস্কার করা মন্তব্য করে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “মন-মগজ যদি সংস্কার না হয় আখেরে ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমাদের মন-মানসিকতায় সংস্কার আনতে হবে।”
১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের সংস্কার কাজের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন সিইসি।
তিনি বলেন, “এবার তো আমাদের চারদিকে যে চিন্তাভাবনা দেখছি, যে প্রেসার, রিফর্মস মানে রিফর্মস প্রপোজাল নয়। এগ্রিড প্রপোজালগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেখতে পাচ্ছি। সরকার চাচ্ছে, যেগুলোকে ঐকমত্যে হবে সেগুলো মোটামুটিভাবে অধিকাংশ বাস্তবায়ন করা যায়, সেজন্য কাজ করছে। আমাদের এখানেও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন রয়েছে। তারা যে সুপারিশ দেবে তাতেও আমাদের বিধি-বিধান আইন-কানুনে পরিবর্তন আনতে হবে।”
সিইসি বলেন, “ইতোমধ্যে দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১২ কোটি ৩৬ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে সবশেষ হালনাগাদে ২ জানুয়ারি ১৮ লাখের বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ২০ জানুয়ারি থেকে নতুন করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের কমিটমেন্ট হচ্ছে, একটা ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দেওয়া। যেটা এতদিন জাতি বঞ্চিত হয়েছে। আমি প্রায়ই বলি- আমাদের যারা বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসনে যাচ্ছে, আন্দোলন করছে, তাদের বঞ্চনার তথ্য তুলে ধরছে। দেশের ১৮ কোটি বঞ্চিত মানুষ কোথায় যাবে?”
সামনে নির্ভুল ভোটার তালিকার পাশাপাশি ও নির্বাচনে সবার ভোটাধিকার নিশ্চিতের কথা তুলে ধরেন সিইসি।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত ১৮ কোটি মানুষ। তারা আসবে আমাদের কাছে। তাদের এ বঞ্চনার দুঃখ বলার জন্য আমরা আছি। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি-ইনশাহআল্লাহ তাদের বঞ্চিতা যেন ঘোচাতে পারি। তারা যে বঞ্চিত হয়েছে, যে ভোটার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে সেটা ঘোচাতে চাই। বঞ্চনার কষ্ট দূর করতে চাই। আমাদের কমিটমেন্টে অটল আছি। সবার সহযোগিতা চাই।”
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ভোটে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। নির্ভুল ভোটার তালিকা সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত বলেও মনে করে কমিশন। এসময় ভোটার তালিকা হালনাগাদে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং তৎপরতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচন যেভাবে কলুষিত হয়েছে তা পুনরুদ্ধারে যা যা করা লাগে তার সবটুকুই করবে কমিশন। ভোটার হালনাগাদে অনিয়ম, অবহেলা অস্বচ্ছতা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
আরও পড়ুন:
আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু হবে: প্রধান উপদেষ্টা
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বিষয়ে জনমত গঠনে দেশব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা