ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক পরিচয়ে পুলিশে ৮০ থেকে ৯০ হাজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের আগে নানাভাবে তাদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। নিয়োগ পার্থী কোন দলের, তার বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের তা খবর নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
সাজ্জাত আলী বলেন, দুই লাখ পুলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এসব পুলিশ সদস্যকে তো এখন বলতে পারি না বাসায় ফিরে যাও। তবে যারা পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে অপকর্মে লিপ্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানির ঘটনা বেড়েছে। পুলিশ হোক আর মামলার বাদী হোক, তথাকথিত ব্যক্তিদের আসামি করে যারা চাঁদাবাজি করছেন তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাজ্জাত আলী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনেক মামলায় নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ভয় নেই, তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা আসবে শুধু তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা সেবক হতে চাই। থানায় জিডি হওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর নয়, দুই থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দেবেন পুলিশ অফিসার। তিনি অভিযোগ শুনবেন এবং গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, মামলা অথবা জিডি হোক সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো ঘটনা যেন হাইড না থাকে। যে ঘটনায় মামলা হওয়ার কথা সেটার জন্য মামলাই নিতে হবে, যেটার জন্য জিডি নেওয়ার কথা সেটার জিডিই হতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। এই শহরে বিপুল সংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অটোরিকশা যদি বন্ধ না হয় তাহলে ঢাকা শহরের ঘর থেকে বের হলে আর হাঁটার জায়গা থাকবে না। মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। ট্রাফিক আইন কেউ মানতে চান না। হকাররা ফুটপাত দখল করে নিয়েছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছি। ট্রাফিক আইনে দ্বিগুণ হারে মামলা করা হচ্ছে। ঢাকাবাসীর সহযোগিতা ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত হবে না।
ইদানিং ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহ হচ্ছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিভিন্নভাবে আমাকে জানানো হয়েছে ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি হচ্ছে, কিন্তু সমাজ থেকে প্রতিরোধ করা না গেলে চাঁদাবাজি বন্ধ করা কঠিন। আপনারা কেউ চাঁদা দেবেন না। আমরা পুলিশ জনগণের পাশে থাকবো।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় আমি ঢাকাসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
তিনি বলেন, ডিএমপির ওই সময়ের অপেশাদার আচরণের কারণে বদলি ও দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।