ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহে চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আকাশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক ২ জনকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত অটো উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের কাছে দেয়া গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, ফেসবুকে ছবি দেখে এক তরুণীকে তিন বন্ধুই পছন্দ করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কথাবার্তা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণীর সঙ্গে গভীর সর্ম্পকে জড়িয়ে যান তিনজনই। এ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার জেরে দুই বন্ধু একত্র হয়ে জেদ মেটাতে অপর বন্ধু আকাশকে (২০) ডেকে নিয়ে হত্যা করেন এবং অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। নিহত আকাশ কোতোয়ালি থানাধীন চর হাসাদিয়া এলাকার মো. খোকন মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক।
এ ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যে হত্যায় অভিযুক্ত মিলন (২০) ও রবিন মিয়াকে (১৯) রাজধানীর খিলগাও থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ময়নসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশিদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২৬ নভেম্বর রাতে সদরের চর সিরতা সরকারবাড়ি টেকের মাথা কালভার্ট (ব্রীজ) সংলগ্ন পাঁকা রাস্তার পূর্ব পাশে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পায় পুলিশ। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। মৃতের পরিচয় সনাক্ত করে জানা যায়, আকাশ মিয়া সদরের চর হাসাদিয়া এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন অটো চালক। হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে তার অটো নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে ডিবি। ওসি শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর খিলগাঁও বস্তি থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত রবিন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্য মতে শনিবার ভোরে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি মিলনকে খিলগাঁওয়ের অপর একটি বস্তি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরবর্তীতে ভালুকার মাস্টার বাড়ি এলাকার সাগর মিয়ার গ্যারেজের সামনে থেকে অটোরিকশাটি উদ্ধার করে পুলিশ।
ডিবির ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, নিহত আকাশ ও তার হত্যাকারীরা একই গ্রামের বাসিন্দা। মিলন ঢাকায় পোশাক শিল্পের শ্রমিক এবং রবিন চালের আড়তের শ্রমিক এবং নিহত আকাশ তাদের বন্ধু। ফেসবুকে ছবি দেখে এক তরুণীকে তিন বন্ধুই পছন্দ করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কথাবার্তা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণীর সঙ্গে গভীর সর্ম্পকে জড়িয়ে যান তিনজনই। এ নিয়ে দুই বন্ধু আকাশ ও মিলনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দুই মাস আগে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ বিরোধে মিলন ও রবিন আকাশকে হত্যা ও তার অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মিলন ভিকটিম আকাশকে ফোন করে তার অটো নিয়ে আসতে বলেন। আকাশ সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে অটো নিয়ে মিলনের কাছে আসে। মিলন ও রবিন আকাশের অটোতে পরানগঞ্জ ও বোররচরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অটোর পিছনের সিট থেকে মিলন আকাশের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে টান দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করে রাস্তার পাশের ধানক্ষেতে তাকে ফেলে অটো নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
তিনি আরো জানান, আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।