মোঃ শরিফ উদ্দিন, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি: স্মরণকালের ভয়াবহ ঢলের পানি দেখলেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেষা শেরপুর জেলার মানুষ। টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো নদীর বাঁধ ভেঙে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরসহ নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
এছাড়া ঢলের পানিতে নালিতাবাড়ীর খলিশাকুড়ির খলিলুর রহমান (৬৫), আন্ধারুপাড়া বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী (৬৫) ও ঝিনাইগাতীর সন্ধাকুড়ায় অজ্ঞাত ব্যক্তিসহ তিনজন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পাড়ে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৬৫৯ মিলিমিটার, পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর পানি ৫২৫ মিলিমিটার ও ভোগাই নদীর দু’টি পয়েন্টের পানি ১৭২ মিলিমিটার এবং ৫৬ মিলিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এছাড়াও অপর দু’টি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এসব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঝিনাইগাতি উপজেলা সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ ইতিমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে।
নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মন্ডলিয়াপাড়া ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই এবং চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙেছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার, ঝিনাইগাতি-ধানশাইল সড়কসহ অসংখ্য সড়ক। চেল্লাখালী নদীর তীরবর্তী বাতকুচি এলাকা প্লাবিত হয়ে অনেকে বাড়িতে আটকা পড়েছেন।
এছাড়া নন্নী-আমবাগান সড়ক, নন্নী-মধুটিলা ইকোপার্ক সড়ক, আমবাগান-বাতকুচি সড়ক চেল্লাখালী নদীর পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। জেলার প্রতিটি শহরে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানিতে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতির অন্তত ১০টি ইউনিয়নে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির উঠতি আমন ফসল, সবজি বাগান এবং মাছের ঘের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ১৭৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ২৫৫ ও ২৬০ মিলিমিটার। অপর একটি বিস্তস্থ সূত্রে জানাগেছে, ভারতের মেঘালয়ের তুরা এলাকায় আজ সকাল পর্যন্ত ব্যপক বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ওই পানি শেরপুরের ভোগাই, চেল্লাখলি ও মহারশি নদী দিয়ে প্রভাহিত হওয়া আরেক দফা ঢলের আশংকা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৭শ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণ পানির নীচে এবং ৯ হাজার ৭শ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক পানির নীচে তলিয়ে গেছে। ৬শ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।তবে এ ক্ষতির পরিমান আরো অনেক বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, আটকে পড়াদের উদ্ধারে অংশ নিয়েছেন ঝিনাইগাতি এবং নালিতাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ত্রাণ সহায়তা অব্যহত রয়েছে। তবে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে শেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থানে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন ও রূপসী শেরপুর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পানিতে আটকাপরাদের উদ্ধার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।