মুফতি জাকারিয়া হারুন ।। মহান আল্লাহ সব কিছুর উত্তম বিচারক। তিনি পছন্দ করেন না অবিচার ও জুলুম। যে জুলুম করে তাকে জালেম বলে। আর যার উপর জুলুম করা হয় তাকে মজলুম বলে। ইসলামে জুলুম অত্যন্ত নিন্দিত। মজলুম ব্যক্তির দোয়া মহান আল্লাহ সরাসরি কবুল করেন। তাই ন্যূনতম জুলুম করা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে।
এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। অন্যের ওপর জুলুম করে নিজের পতন ডেকে আনে জালিমরা। আপদ-বিপদে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম। তাই তো মহান আল্লাহ জুলুম থেকে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ নিজের জন্যও এটিকে হারাম করেছেন।
রসুল রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম: ৬৭৩৭)
মজলুম ব্যক্তির আকুতি মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি: ৩৫৯৮)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রসুল রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুআজ (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠান এবং তাকে বলেন, মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মধ্যে পর্দা থাকে না। (বুখারি: ২৪৪৮)
কারও ওপর জুলুম করলে দুনিয়াতেই এর শাস্তি পেতে হয়। আর পরকালের ভয়ংকর শাস্তি তো রয়েছেই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, রসুল রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, ওই দিন আসার আগে, যে দিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার কাছ থেকে নেয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারি: ২৪৪৯)
আরেক হাদিসে রসুল রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, সে আর ছুটে যেতে পারে না। (বুখারি: ৪৬৮৬)
মজলুমের বদদোয়াকে যে কারণে ভয় করা উচিত