আহসান আলম।। বেশ কিছুদিন ধরে ইন্টারনেট সংযোগ বিছিন্ন। বাড়ির অ্যান্ড্রোয়েড টেলিভিশন গুলো অলস সময় পার করছে। এখন আর আগের মতো ঘনঘন মোবাইলে চার্জ দিতে হয় না। বাবা-মা, ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশিদের মধ্যে যে দুরত্ব তৈরি হয়েছিল তা এখন ৯০ দশকের দিনগুলির মতো সৌহার্দ্রপূর্ণ সম্পর্কে পরিনত হয়েছে। ক’দিন আগেও মোবাইলে ১০০% চার্জ দিলে ‘ফেসবুক’ ‘ইউটিউব’ ব্যবহারের ফলে দিনে আরও বেশ ক’একবার চার্জ দিতে হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারনে এখন এক চার্জেই দুই থেকে আড়াই দিন চলে মোবাইল ফোন।
ক’দিন আগেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে দুরত্বগাথা সম্পর্ক দেখা যেত, ফেসবুক ব্যবহার না থাকায় সেই সম্পর্ক ভলোবাসায় রুপ নিয়েছে। যে সন্তানকে বকা দিয়েও খেলার মাঠে পাঠানো যায়নি, এখন বিকেল হলেই সেই সন্তান প্রতিবেশি বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে যায়। প্রয়োজনে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে খেলতে শুরু করে। প্রতিবেশি ভাবিদের মধ্যে মাসে বা সপ্তাহে ঠিকমতো দেখা হতো কিনা মনে পড়ে না। কিন্তু এখন! প্রতিদিন বিকেল হলেই পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে জমে প্রতিবেশি ভাবিদের গল্পের আড্ড এ যেনো এক ভালোবাসার সেতু বন্ধন।
ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারনে ‘ফেসবুক’ ‘ইউটিউব’ ‘ইমো’ ব্যবহার করতে না পেরে সবাই আজ একত্রিত। তবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিংসেন্টারগুলো বন্ধ থাকায় শহরে ইভটিজিং কিছুটা হলেও কমেছে। গত ক’দিন চুয়াডাঙ্গা শহরের অলিগলি, পাড়া-মহল্লা, খেলার মাঠ ঘুরে এমনই চিত্র চোখে পড়েছে।
এদিকে, অভিমানি প্রিয়ার মান ভাঙাতে ইমো-হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জারে ঘন্টার পর ঘন্টা কথার ফুলঝুড়ি ফুটলেও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় এখন তা বিধিবাম। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ এবং মোবাইলের কলরেট বেড়ে যাওয়ায় প্রেমিক যুগলদের মধ্যে নেই আগের মতো যোগাযোগ। বুকের জমানো ব্যথা আর কান্নার নোনাজলে বুক ভাসলেও হয়তো এ পরিস্থিতি আর বেশি দিন থাকবে না। আবার সবাই ফিরে আসবে ডিজিটাল যুগে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের পাশেই মাখালডাঙ্গা সড়কে মোটরসাইকেলে ঘুরছিলেন দু’জন। পরিচয়ে জানা গেলো তারা স্বামী-স্ত্রী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আসলে আমরা অনেক বোকা। এতোদিন মন্দোটাকে ভালো ভেবে সেটাকে আগলে রেখেছিলাম। ফেসবুক ইউটিউব আমাদের এতোটাই আকৃষ্ঠ করেছিল যে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম নিজেদের সংসার জীবনের কথা।
ওই দম্পত্ত্বি আরও বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে সাড়ে ৬মাস। সংসারের কাজ সেরে অবসর সময়ে আমরা ফেসবুক নিয়েই নিজেদের ব্যস্ত রাখতাম। ইন্টারনেট না থাকায় ফেসবুক চালাতে পারছি না। অবসর সময় কাটাতে আমরা ঘুরতে বের হয়েছি। এখন বুঝতে পারছি পরিবার কি। জীবনটাকে সুন্দর ভাবে সাজাতে অবসরে পরিবারকে সময় দিতে হবে।