কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) তারা যাত্রবাড়ি, মধ্যবাড্ডা এবং মতিঝিলের ইত্তেফাক মোড় এবং মিরপুর-১০ নম্বরে জড়ো হয়েছে আন্দোলন করছে।
এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করছেন আন্দোলনকারীরা। এতে মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেখানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কোনো যানবাহন ঢাকা থেকে বের হতে পারছে না। আবার কোনো যানবাহন ঢুকতেও পারছে না। এমনকি রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেলও যেতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে অনেক গাড়ি আটকা পড়েছে। এর মধ্যে পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাও রয়েছে।
এছাড়া সরকারি চাকরিতে কোটার সংস্কার দাবি করে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্দোলন করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল সাড়ে ১০টার পর শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। পরে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে মেরুল বাড্ডা এলাকায় যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকশ শিক্ষার্থী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। এ সময় মেরুল বাড্ডা এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহনের চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকে আছে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মেডিকেল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।
এদিকে রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
এর আগে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হঠাতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পাল্টাপাল্টি ইট পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এরপর পুলিশের ধাওয়ায় একদল শিক্ষার্থী আশপাশের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন।
রাজধানীর মিরপুর-১০ এ থেমে থেমে পুলিশ ও কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। শুরুতে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।পরে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
এদিকে পুলিশ সংঘর্ষে জড়িয়েছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার এক পর্যায়ে ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে পড়ে পুলিশ সদস্যরা। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল রাজধানীজুড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি। রাজধানীর রামপুরা, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, পুরানা পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় যান চলাচল একেবারেই সীমিত। নিরাপত্তার শঙ্কায় বেশিরভাগ দোকানপাটও বন্ধ দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে গতকাল ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।