বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান।
উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ এই কর্মকর্তা জানান, সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে এবং পানি প্রবেশ করেছে। এরকম ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপাতত পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০টি এবং বাকি পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও পাঠদান শুরু হবে।
এদিকে, বগুড়ায় টানা কয়েকদিন বৃদ্ধির পর কমতে শুরু করেছে যমুনার পানি৷ গত ২৪ ঘন্টায় ৪ সেন্টিমিটার পানি কমেছে৷ ফলে এখন বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার বেলা ১২টায় এ তথ্য জানিয়েছে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আজ বেলা ১২টায় দেয়া আপডেটে জানানো হয়, যমুনা নদীর বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ মিটার থেকে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৮৪ মিটার অর্থ্যাৎ বিপদসীমার ৫৯সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। রবিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ৪ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে ডুবেছে চরের নিম্নাঞ্চলের বসত বাড়ি, তলিয়ে গেছে বিস্তর ফসলের ক্ষেত। চরাঞ্চলে বেশ কিছু সড়ক ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে যমুনার পানি। নদী তীর ও বাধের মাঝে বসতবাড়ীতে পানি প্রবেশ করায় বাড়ি ঘর সরিয়ে নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে হাজারো মানুষ। এর মধ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
বগুড়ায় যমুনার পানি বাড়তে শুরু করে গত সপ্তাহ থেকেই। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে গত বুধবার রাতে যমুনা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরের নিচু গ্রামগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবারের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। তিন উপজেলার ১৩৫৬ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমনের বীজতলা, সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আলহাজ নাজমুল হক জানান, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনার পানি রবিবার সকালে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে এসব উপজেলার চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি ও চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু জায়গা ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পানি বৃদ্ধি পেলেও যমুনা তীরের ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এখনো কোনো ঝুঁকি দেখা দেয়নি। যমুনার ৬টি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে ইছামারা অংশে ভাঙন প্রবল। সেখানে নদী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। ঝুঁকিপূর্ণ ওই এলাকা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবুর রহমান জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দিতে ৫৬০ হেক্টর এবং সোনাতলা উপজেলায় ২৬১ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এসব জমিতে পাট, ভুট্টা ও সবজি চাষ করা হয়েছিল।