October 9, 2024 - 12:22 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসারাদেশ ও রাজনীতিসারাদেশশেরপুরে নদীর ভাঙন কবলিত তীর ঘেঁষে চলছে বালু উত্তোলন

শেরপুরে নদীর ভাঙন কবলিত তীর ঘেঁষে চলছে বালু উত্তোলন

spot_img

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদীর সাতটি পয়েন্টে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করে। ফলে করতোয়া নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি, বসতবাড়ি ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। নদীর তীর সংরক্ষণে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রক্ষা করার কাজ চলছে। কিন্তু ভাঙ্গনের তীর ঘেষে পনের ফিটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে সেই বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে। এতে নদীর ভাঙন ঠেকাতে নেওয়া প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিয়মের প্রশ্ন উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি নদীতে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় করতোয়া নদীর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর মধ্যপাড়া, সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর, মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালা এলাকার অন্তত সাতটি পয়েন্টে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করে। ফলে করতোয়া নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি, বসতবাড়ি ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়া বিগত কয়েকদিনের ভাঙণে জামিল হোসেন, চান মিয়া, আব্দুস সাত্তার, মনছের আলী, রুমা বেগমসহ দশ বারোজন ব্যক্তির ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকাও ভাঙনের কবলে পড়ে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত তিনমাস আগে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঙালি নদী খনন করা হয়। নদীটি দশ থেকে পনের ফুট অপরিকল্পিতভাবে গভীর করায় করতোয়ার নদীর এমন ভাঙ্গন শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এমনকি তাদের দাবি উপেক্ষা করেই বাঙালি নদী খনন করা মাটি দিয়ে করতোয়া নদীর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বাঙালি ও করতোয়া নদীর মিলনস্থলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়। আর এই কারণেই আষাঢ়ের বৃষ্টি ও উজান নেমে আসা পানির চাপে অসময়ে করতোয়া নদীর তীরবর্তী স্থানে ভাঙন শুরু হয়। এদিকে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প এলাকায় যেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হবে- তার দশ থেকে পনের ফিটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে গভীর করে বালু উঠানো হচ্ছে। আবার ওই বালু দিয়েই ভর্তি করা হচ্ছে জিও ব্যাগ। বিগত চারদিন ধরে এভাবেই অবৈধ ওই কর্মযজ্ঞটি চলছেও দেখার কেউ নেই। এসময় কথা হয় বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন ও ব্যবসা করে থাকি। তাই ঠিকাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কথা এড়িয়ে যাওয়া একটু সমস্যা। তাই তাদের অনুরোধে করতোয়া নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে দিচ্ছি। যা দিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে। এসব জিও ব্যাগ নদীর ভাঙন কবলিত তীরবর্তী স্থানে ফেলা হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাই জানেন বলেও দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, করতোয়া নদীর তীরবর্তী ভাঙন ঠেকাতে যেসব জিও ব্যাগ তৈরী হচ্ছে-তার জন্য কোনো বালু কেনা হয়নি। সমস্ত বালু করতোয়া নদীর খানপুর মধ্যপাড়া অংশে জিও ব্যাগ বসানোর স্থানের পনের ফিটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উঠানো হচ্ছে। এভাবে ভাঙন কবলিত নদীর তীরবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙন রুপ নিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় কোনো সিটিজেন চার্ট নেই। তাই প্রকল্প ব্যয় বিষয়ে বিস্তারিত কেউ জানে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজওয়া ট্রেড সিস্টেম লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী রবিন সরকার বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মতি নিয়েই নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। বরং নদীর চর কেটে যাবে এবং পানি প্রবাহে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এজন্য তাজওয়া ট্রেড সিস্টেম লিঃ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে কাজও শুরু করেছেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু নদীর ভাঙন কবলিত তীরবর্তী স্থানে দশ থেকে পনের ফিটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগ ভর্তির বিষয়টি জানা নেই। তবে নদীর মধ্যে একটি ডুবুচর রয়েছে-সেটি অপসারণের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। এরপরও একটু খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সুমন জিহাদী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করছে। তাই বিস্তারিত তারাই ভালো বলতে পারবেন। এরপরও খোঁজখবর নিয়ে দেখি, যদি কোনো নিয়মের ব্যতয় ঘটে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এই নির্বাহী কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ