September 20, 2024 - 5:43 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসভালো কোম্পানি আনতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন: এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ

ভালো কোম্পানি আনতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন: এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ

spot_img

এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) । এর আগে তিনি মীনহার গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও মীনহার সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৯৫ সালে দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) থেকে সিএমএ এবং ১৯৯৮ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস বাংলাদেশ (আইসিএবি) থেকে সিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাতকার দেন।

প্রশ্ন: বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন?

সাইফুর রহমান: পুঁজিবাজার থেকে উঠে আসা মানুষ। আমার ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় কোনো না কোনোভাবে এ বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার দৃষ্টিতে বাজারে কিছু সমস্যা আছে। আবার সংশ্লিষ্টরা বাজার উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখছেন। ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধীরে ধীরে ফিরছে। বাজারকে কাক্সিক্ষত জায়গায় নিতে আরও সময় লাগবে। সে জায়গায় নিতে সবাই নিরলসভাবে কাজ করছে।

প্রশ্ন: সিএসইর লেনদেন কম হওয়ার কারণ কী?

সাইফুর রহমান: লেনদেন কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে রয়েছে, শাখার সংখ্যা কম থাকা, দ্বৈত স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে অনেকের সিএসইর টার্মিনাল ব্যবহারে অনাগ্রহ, বাজার গভীরতা কম থাকা ইত্যাদি।

প্রশ্ন: লেনদেন বাড়াতে কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে?

সাইফুর রহমান: লেনদেন বাড়াতে অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। দ্বৈত স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় করতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে অনেকে সিএসইতে লেনদেন করে না। আমরা তাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করছি, যাতে তারা ডিএসইর পাশাপাশি সিএসইর ওয়ার্কস্টেশনও খুলে রাখে। সেখানেও কিছু কেনাবেচা করে। যেসব দ্বৈত স্টেকহোল্ডার ডিএসইর শাখা চালাচ্ছে, তাদের যদি সহজে একই অফিসে সিএসইর শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু ওয়ার্কস্টেশন বা ট্রেডিং টারমিনালের সংখ্যা বাড়বে। এতে লেনদেনও বাড়বে। এ সুবিধার কারণে ডিএসইও লাভবান হবে। কারণ অনেক সময় দুই স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারের দামের মধ্যে কিছু তারতম্য থাকে। এক এক্সচেঞ্জ থেকে বেচে অন্য এক্সচেঞ্জ থেকে কেনার সুযোগ থাকলে দামের তারতম্যের এই সুযোগ কাজে লাগাবেন বিনিয়োগকারীরা। কিছু কিছু শেয়ারে পর্যাপ্ত ক্রেতা-বিক্রেতা থাকে না। এ কারণে অনেকে এখানে লেনদেন করতে আগ্রহ দেখান না। আবার অনেক বিনিয়োগকারী জানেনই না সিএসইর লেনদেন ঢাকায় বা অন্য জায়গা থেকেও করা যায়। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই থেকে সিএসই প্রযুক্তিগত কতটুকু এগিয়ে?

সাইফুর রহমান: লেনদেনে ডিএসই থেকে আমরা পিছিয়ে থাকলেও প্রযুক্তিতে অনেকগুণ এগিয়ে সিএসই। ডিএসইর আগে আমরা সিএসই চিত্রা, সিএসই ক্লাউড, আইটিএস ট্রেডিং চালু করেছি। এগুলোর ফিচারও অনেক উন্নত। তবে দুর্ভাগ্যবশত এগুলো সেভাবে প্রচার পায়নি। স্টেকহোল্ডারদের মাধ্যমে এসব ফিচার বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। লিফলেট, পোস্টার, ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমেও প্রচার বাড়ানো হচ্ছে।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানি আছে? ভালো ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে কী করণীয়?

সাইফুর রহমান: আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির সংকট রয়েছে। ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারমুখী করতে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। অন্যদিকে চার শতাধিক বিদেশি কোম্পানি দেশে ব্যবসা করলেও মাত্র ১৩টি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। বাকি কোম্পানিগুলো যথাযথ উদ্যোগের অভাবে পুঁজিবাজারে আসছে না। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে (বাজার মূলধনের দিক থেকে) ২৬ শতাংশে আটকে আছে বিদেশি কোম্পানির অবদান। ভালো ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাজারে আনতে সরকারের সঙ্গে সবাইকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রশ্ন: তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে স্টক এক্সচেঞ্জে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আছে। তা ব্যবহারে কতটুকু সক্রিয় সিএসই?

সাইফুর রহমান: বর্তমানে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের অনুসন্ধান সেল সক্রিয়। তবে তারা সরাসরি কোনো অ্যাকশনে যান না। স্টক এক্সচেঞ্জের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ডিএসই ও সিএসই অনুসন্ধান করে তার প্রতিবেদন বিএসইসিকে দিয়ে থাকে। সে আলোকেই সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

প্রশ্ন: দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একীভূতকরণে (মার্জারে) কোনো নীতিমালা নেই। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কেমন নীতিমালা হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

সাইফুর রহমান: মার্জার নীতিমালা তৈরির জন্য বিএসইসি কাজ করছে। আশা করি, একটি আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালা তৈরি হবে। কোনো এক কোম্পানির সঙ্গে অন্য কোম্পানির একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনা জরুরি। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ন্যায্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২৮ ও ২২৯ ধারা অনুসারে দেশে মার্জার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। এজন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির একটি যুগোপযোগী নীতিমালা জরুরি। শেয়ার এক্সচেঞ্জ বা শেয়ার রেশিওর পদ্ধতি সবার বিশ্বাসযোগ্য করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জকেও আরও কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন: কোম্পানি মার্জার হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন?

সাইফুর রহমান: আমাদের দেশে ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে টেক্সটাইল খাতের একটি কোম্পানি মার্জার হওয়া খারাপ কিছু না। কোম্পানির সদিচ্ছার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। কোন কোম্পানির সঙ্গে কোন কোম্পানির মার্জার হলো, এটা কোনো বিষয় নয়। কোম্পানির উদ্দেশ্য কী, সেটা দেখতে হবে। মার্জার হওয়া কোম্পানিগুলোর উচিত ব্যবসা বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বেশি লাভ দেওয়া।

প্রশ্ন: স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) করার সুফল কি সিএসই ভোগ করছে?
সাইফুর রহমান: ডিমিউচুয়ালাইজেশন একটি ভালো পদ্ধতি। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা একধাপ এগিয়ে গেছে। তবে এর সুফল পেতে আরও সময় লাগবে। এর উদ্দেশ্য সফল করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সুশাসন চর্চা আরও জোরালো করতে হবে।

প্রশ্ন: বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি বা আর্থিক শিক্ষা নামক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিএসইসি। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?

সাইফুর রহমান: বিনিয়োগে ঝুঁকি পূর্বানুমানে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সব বিনিয়োগকারী সজাগ থাকলে পুঁজিবাজার সমৃদ্ধ হবে। এজন্য তাদের পর্যাপ্ত ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি থাকার কোনো বিকল্প নেই। ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে দরকার বিএসইসির একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাজারে সত্যিকার অর্থে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। সাসটেইনেবল (টেকসই) বাজারের জন্য দক্ষ বা শিক্ষিত বিনিয়োগকারীর বিকল্প নেই।
ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি বাজার-সংশ্লিষ্ট সবাই যদি এ কার্যক্রমে অংশ নেন, তাহলে সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে।

প্রশ্ন: মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পুঁজিবাজারের ভূমিকা মাত্র ১৯ শতাংশ। জিডিপিতে বাজারের অবদান বাড়াতে কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?

সাইফুর রহমান: আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান বড় অঙ্কের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে। জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে অর্থনীতির নীতিনির্ধারকদেরও পুঁজিবাজারের দিকে তাকাতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ সব নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এটি হলে বিনিয়োগকারীরা দেখবেন সরকারের পলিসিতে পুঁজিবাজার গুরুত্ব পাচ্ছে।

সৌজন্যে: শেয়ার বিজ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ