ট্যানারিগুলোর জন্য পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় সময় পবিত্র ঈদুল আজহা। দেশে সারা বছরে যে পরিমাণ চামড়া সংগৃহীত হয় তার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশই পাওয়া যায় এ সময়। কোরবানিতে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি, সরবরাহ ও বাজার নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান।
প্রশ্ন : এখন চামড়ার দাম কেমন?
টিপু সুলতান: ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসায় দাম একটু বাড়ছে। কিছুদিন আগেও একেকটি চামড়া গড়ে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় উঠেছে।
প্রশ্ন: ঈদে চামড়ার সরবরাহ বেশি হয়। এ সময় কি দাম বাড়ে?
টিপু সুলতান: ঈদের সময় সব ট্যানারি চামড়া কেনে। এতে চাহিদা একটু ভালো থাকে। ফলে ঈদের আগে কিছুটা দাম বাড়ে। এখন সেটাই হচ্ছে।
প্রশ্ন: গত দুই বছরে যেভাবে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে, সেভাবে কি চামড়ার দাম বেড়েছে?
টিপু সুলতান: না, না, বাড়েনি। বরং কমেছে। দুই বছর আগে তো বড় চামড়া ৩ হাজার ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। গত বছর ওই চামড়া লবণমিশ্রিত অবস্থায় ২ হাজার ৪০০ টাকার আশপাশের দামে বিক্রি হয়েছে। এবার সেটা ১ হাজার ৭০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হতে পারে।
প্রশ্ন: দাম এভাবে কমে যাওয়ার কারণ কী?
টিপু সুলতান: বড় কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে খারাপ অবস্থা চলছে। পাশাপাশি ট্যানারি সরানোর কার্যক্রম নিয়ে ধূম্রজাল, জরিমানা ইত্যাদি কারণে চামড়ার দাম কমে গেছে।
প্রশ্ন: এসব কারণে এবার কোরবানির চামড়া কেনার ক্ষেত্রে কি অনীহা আছে?
টিপু সুলতান: না, অনীহা থাকার সুযোগ নেই। চামড়া কিনতেই হবে। আমরা না কিনলে সব চামড়া পচে যাবে। আমরা এক বছর ব্যবসা না করলে আমাদের ক্ষতি নেই। কিন্তু দেশের সম্পদ নষ্ট হবে।
প্রশ্ন: কোরবানির সময়ে কী পরিমাণ চামড়া সংগৃহীত হয়?
টিপু সুলতান: সারা বছরে যে পরিমাণ চামড়ার জোগান আসে তার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ আসে কোরবানির ঈদে। এ সময় দেশে প্রায় ৬০ লাখ গরু-মহিষ জবাই হয়। এ ছাড়া কোটিখানেক ছাগল-ভেড়ার চামড়া পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: এবারের ঈদে চামড়ার বাজার কেমন যাবে বলে মনে হচ্ছে?
প্রশ্ন: ঈদে চাহিদা থাকবে। ফলে বাজারও ভালো যাবে আশা করা যায়। তবে সমস্যা হলো লবণ নিয়ে। কারণ লবণের দাম বেশি। অতীতে এক বস্তা (৮০ কেজি) লবণ আমরা ৫৫০ টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম। এখন সেটা ১ হাজার ৪০০ টাকার বেশি চাইছে।
প্রশ্ন: লবণের বাড়তি দামের কারণে চামড়া সংরক্ষণে খরচ কতটুকু বাড়বে?
টিপু সুলতান: একটি মাঝারি আকারের চামড়া সংরক্ষণে লবণের পেছনে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা খরচ হতো। এবার সেটা ১৮০ টাকায় উঠবে বলে মনে হচ্ছে। এই বাড়তি খরচটা চামড়ার দামের সঙ্গে যোগ হবে।
প্রশ্ন: চামড়া কিনতে আপনাদের আর্থিক প্রস্তুতি কী রকম?
টিপু সুলতান: ব্যাংক তো ঋণ দিতে চাচ্ছে না। তারা খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তারা আগের ঋণ সমন্বয় করতে বলে। অনেক রকমের টালবাহানা করছে।
প্রশ্ন: কোরবানির ঈদে ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়?
টিপু সুলতান: এ সময় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয় ট্যানারিগুলো। আমাদেরও কিছু কিছু দেয়। তবে আমাদেরই বেশি ঋণ দেওয়া উচিত। কারণ আমরাই কাঁচামালের জোগান দিই।
প্রশ্ন: কোরবানি উপলক্ষে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা কি ভালো, না খারাপ?
টিপু সুলতান: এক দিক দিয়ে ভালো, আরেক দিক দিয়ে খারাপ। দাম নির্ধারণ না করলে ভারতে পাচারের আশঙ্কা থাকে। আর দাম ঠিক করলে দেখা যায়, ট্যানারি পর্যায়ে যে দাম হওয়া উচিত সেই দরে মাঠপর্যায়ে সবাই চামড়া কিনছে। এতে চূড়ান্তভাবে দাম অনেক বেশি পড়ে যায়, যা ট্যানারির কাছে বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: ভারত যেহেতু গরু জবাই কমিয়ে দিয়েছে সেহেতু বাংলাদেশি চামড়া সেখানকার ট্যানারিগুলোতে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কি?
টিপু সুলতান: হ্যাঁ, এবার ভারতের চাহিদা বেশি থাকবে। পাচারকারীরা দামও বেশি দেয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পাচার আগের চেয়ে অনেক কমেছে।
প্রশ্ন: আপনারা চামড়া ব্যবসায়ীরা তো সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে জমি পাননি?
টিপু সুলতান: না, আমাদের জমি দেওয়া হয়নি। অবশ্য সরকারের কাছে আমরা ১০ একর জমি চেয়ে আবেদন করেছি। সরকার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রশ্ন: পুরান ঢাকার পোস্তায় চামড়ায় লবণ মাখানোয় ও উচ্ছিষ্ট কেটে ফেলে রাখার কারণে কি পরিবেশদূষণ হয় না?
টিপু সুলতান: হয় তো। এ জন্য আমরাও সাভারে যেতে চাই।
সৌজন্যে: দৈনিক প্রথম আলো।