September 20, 2024 - 5:33 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসচামড়া খাতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে : মহিউদ্দিন আহমেদ, সভাপতি, বিএফএলএলএফইএ

চামড়া খাতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে : মহিউদ্দিন আহমেদ, সভাপতি, বিএফএলএলএফইএ

spot_img

হাজারীবাগে থাকা ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিপাকে পড়েছেন মালিকেরা। চলতি মাসের শেষে পরিবেশ অধিদপ্তর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেবে। এ অবস্থায় দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত চামড়াশিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

প্রশ্ন: দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে সরকার বর্ষ পণ্য (প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার) ঘোষণা করেছে। এ খাতকে সম্ভাবনাময় বলা হচ্ছে। আসলে সম্ভাবনা কতটুকু?

মহিউদ্দিন আহমেদ: ছয় দশক আগে বাংলাদেশে চামড়াশিল্প যাত্রা শুরু করে। ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত আমরা শুধু চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার প্রথম ধাপ ওয়েট ব্লু করতাম। এরপর শুরু করি পরের দুই ধাপের (ক্রাস্ট ও ফিনিশড) কাজ। ২০০০ সালের পরে এ দেশে চামড়াজাত পণ্য তৈরির শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। এখন চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বছরে প্রায় ১২০ কোটি ডলার আয় হয়। এটি এখন দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত। তবে বড় কথা হলো, এ খাতে আমরা যে দক্ষতা অর্জন করেছি, তা একটি জাতীয় সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামড়াকে বর্ষ পণ্য ঘোষণা করেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের একটি লক্ষ্য আছে। পাঁচ বছর পরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার, জনসংখ্যা হবে ১৮ কোটি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষও যদি বছরে এক জোড়া করে জুতা ও স্যান্ডেল কিনতে গড়ে ৪ হাজার টাকা ব্যয় করেন, তাহলেও দেশে ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি হবে, যা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সমান। অন্যদিকে চীনের রপ্তানিবাজারের ৫ শতাংশ বাংলাদেশে এলে রপ্তানি আয় ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। চীন থেকে এ বাজার বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনাই বেশি; কারণ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারের মতো দেশগুলোর জনসংখ্যা কম। চামড়া খাতে বাংলাদেশের বড় শক্তি হলো, আমাদের কাঁচামাল আছে।

প্রশ্ন: আপনারা সাভারে উৎপাদনের প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর মধ্যেই আপনাদের হাজারীবাগের কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে চামড়াশিল্পের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে?

মহিউদ্দিন আহমেদ: এখন আমাদের হাতে লাখ লাখ ডলারের রপ্তানি আদেশ আছে। সেগুলো আমরা সরবরাহ করতে পারব না। রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে ক্রেতারা আমাদের প্রতি বিমুখ হবেন। তাঁরা বিকল্প বাজার থেকে পণ্য কেনা শুরু করবেন। ক্রেতা একবার বিমুখ হলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। রপ্তানি আয়ে ভাটা পড়লে কোম্পানির অর্থপ্রবাহ কমবে। এতে শ্রমিকের বেতন-ভাতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। চামড়া বিক্রেতারা পাওনা টাকা পাবেন না। ট্যানারিতে চামড়া অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে থাকবে। এতে কাঁচা চামড়া কেনাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে ক্রেতা চাপ দেবেন, শ্রমিক চাপ দেবেন, ব্যাংক চাপ দেবে—এই ত্রিমুখী চাপে সাভারে আমাদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমরা চামড়াশিল্প নগরে আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। সেটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

প্রশ্ন: সুপ্রিম কোর্ট আপনাদের সময় বৃদ্ধির আবেদন খারিজ করেছেন। এখন হাজারীবাগের ট্যানারি বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আপনারা কী ভাবছেন?

মহিউদ্দিন আহমেদ: সর্বোচ্চ আদালতের রায় আমাদের পালন করতে হবে, সেটা যত কষ্ট হোক, যত অর্থনৈতিক সংকট থাকুক।

প্রশ্ন: সাভারে তো ৪৩টি ট্যানারি ওয়েট ব্লু চামড়া উৎপাদন শুরু করেছে। দু-এক মাসের মধ্যে ক্রাস্ট ও ফিনিশড উৎপাদনে যেতে পারবে কতটি ট্যানারি?

মহিউদ্দিন আহমেদ: এ দুটি পর্যায়ের উৎপাদন শুরু করতে গ্যাস-সংযোগ লাগবেই। গ্যাসের জন্য আমরা জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা ও তিতাসের সঙ্গে কথা বলেছি। ৫১টি ট্যানারি ইতিমধ্যে গ্যাসের জন্য আবেদন করেছে। তবে সরকার কবে নাগাদ গ্যাস-সংযোগ দিতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে বলেনি।

প্রশ্ন: তার মানে চলতি মাসের শেষ দিকে হাজারীবাগে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলে ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদন বন্ধ থাকবে। সঙ্গে রপ্তানিও?

মহিউদ্দিন আহমেদ: গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার পরও দেড়-দুই মাস রপ্তানি বন্ধ থাকার আশঙ্কা আছে। কারণ ভারী যন্ত্রপাতি বসানোর পর সেগুলো পরীক্ষা করা, কারিগরি বিষয়গুলো ঠিক করা, ত্রুটি দেখা দিলে সেগুলো ঠিক করার বিষয় রয়েছে। এর মানে হলো, গ্যাস-সংযোগ পাওয়ার পরও পুরোদমে উৎপাদনে যেতে সময় লাগবে।

প্রশ্ন: চামড়াশিল্পে এই বিপদ নেমে এল, এর পেছনে আপনাদের দায় কতটুকু? বিপরীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) দায় কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?

মহিউদ্দিন আহমেদ: আমরা কখনো বিসিককে প্রতিপক্ষ মনে করিনি। আমরা একই নৌকার যাত্রী, যে নৌকার গন্তব্য শিল্পকে পরিবেশসম্মত করা। আসলে ২০১৪ সালের আগে বিসিক শিল্পমালিকদের এ আস্থা দিতে পারেনি যে সাভারে শিল্পগুলো স্থানান্তরিত হবে। ওই বছর শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর তৎপরতায় চামড়াশিল্প নগরে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ শুরু হয়। এরপরই ট্যানারিমালিকেরা আস্থা পেয়ে কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেন। সেখানে ১২০ ফুট গভীরতায় পাইলিং করতে হয়েছে। ফলে নির্মাণকাজেও বিলম্ব হয়েছে।

প্রশ্ন: অনেক ট্যানারি কাজ এগোতে পারেনি…

মহিউদ্দিন আহমেদ: এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্থিক। আমরা দেড় বছর আগে থেকে বিসিককে তাগাদা দিচ্ছি, যাতে জমিগুলো ট্যানারিমালিকদের রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। যাতে সেগুলো ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া যায়। কিন্তু সেটি হয়নি। বাস্তবতা হলো, অনেক ব্যবসায়ী এ খাত থেকে ঝরে যাবেন।

প্রথম আলো: বিসিক বলছে, চামড়াশিল্প নগরে বর্জ্য পরিশোধনে তারা প্রস্তুত। অথচ চামড়ার লবণ পরিশোধনে কোনো ব্যবস্থা বর্জ্য পরিশোধনাগারে নেই। আপনাদের চোখে বিসিকের প্রস্তুতি কেমন?

মহিউদ্দিন আহমেদ: এ বিষয়টা বিসিক ভালো বলতে পারবে। তবে সেখানে ট্যানারিগুলো যাওয়ার পরে কোনো সমস্যা হলে সে দায় বিসিকের। তাদের মালিকদের বিপুল বিনিয়োগের দায়ও নিতে হবে।

প্রশ্ন: আপনারা শ্রমিকদের নিয়ে কী ভাবছেন? তাঁরা কি চাকরি হারাবেন?

মহিউদ্দিন আহমেদ: শ্রমিকেরা চামড়াশিল্পের সম্পদ। তাঁদের দেখভালে মালিকদের কোনো ত্রুটি থাকবে না। কারখানা পর্যায়ে মালিকদের সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সৌজন্যে: প্রথম আলো

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ