আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের এক দম্পত্তির বিয়ের ২১ বছর পর দুই কাবিনের সন্ধান মিলেছে। এক কাবিনে বিয়ের দেনমহর উল্লেখ আছে আশি হাজার টাকা, অন্যটিতে চার লাখ। কাবিনের মহরানা নিয়ে আদালতে আইনী লড়াই শুরু করেছেন বিচ্ছেদ হওয়া ওই দম্পত্তি। বিয়ের পড়ানোর কাজী খোন্দকার সাইদুর রহমানের মৃত্যু হওয়ায় আদালতের নির্দেশে আসল নকলের কাবিনের সন্ধ্যানে নেমেছে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব আনভেস্টিগেশন। ঘটনা নিয়ে চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালের ৫ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া শ্রীরামপুর গ্রামের সেলিম চৌধুরীর ছেলে শরিফুল ইসলামের সঙ্গে শৈলকুপা উপজেলার হারুনদিয়া গ্রামের রুহুল আমীনের মেয়ে মাছুরা খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয়।
দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। শরিফুল ইসলাম দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী মাছুরা। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। প্রবাসে থাকা স্বামীর কাছে কে বা করা স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের অশ্লিল ও রগরগে ছবি পাঠালে তাদের মধ্যে তীব্র দাম্পত্ত কলহ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে বিয়ের ২১ বছর পর শরিফুল স্ত্রী মাছুরাকে তালাক দিলে চার লাখ টাকার কাবিন সংযুক্ত করে স্ত্রী ঝিনাইদহের একটি আদালতে স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন। মাছুরার মামলার পর সাবেক স্বামীর বড় ভাই মতিয়ার রহমান আশি হাজার টাকার কাবিন দিয়ে ২০২২ সালের ৯ সেপ্টম্বর পাল্টা নালিশী মামলা করেন, যার মামলা নং শৈলকুপা সিআর-৪১৪/২২। এক বিয়েতে দুই কাবিন নিয়ে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক বিষয়টি তদন্ত করে আসল কাবিন সন্ধানের জন্য ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব আনভেস্টিগেশনকে নির্দেশ দেন।
অভিযোগ উঠেছে শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নের কাজী সফিকুর রহমান ও দিগনগর ইউনিয়নের কাজী ইব্রাহীম এই কাবিন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে কাজী ইব্রাহীম মেয়ে পক্ষের কাছে থাকা কাবিনটি নিজ হাতে লিখে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এদিকে বিয়ে পড়ানো কাজী খোন্দকার সাইদুর রহমান ২০২০ সালে ইন্তেকাল করলে তদস্থলে সফিকুর রহমান কাজী নিযুক্ত হন। ফলে তার সাক্ষর জাল করে যে কোন একটি কাবিন সরবরাহ করা হতে পারে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে আদালতের নির্দেশনা পেয়ে গত ১৩ নভেম্বর ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব আনভেস্টিগেশন এর এসআই ইসমাইল হোসেন নিকাহনামা রেজিষ্ট্রিকৃত কাজীর নাম ও ঠিকানা যাচাই করার জন্য ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্টার দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন, যার স্মারক নং ৪০৬৪/২২।
এসআই ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মঙ্গলবার বিকালে মুঠোফোনে জানান, জেলা রেজিষ্টারের দপ্তর থেকে এখনো কোন উত্তর আসেনি। তিনি বলেন, অবশ্যই কেউ না কেউ এই কাবিন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কারণ একই দিন বিয়ের দুই কাবিনসহ বালাম, কেস নং ও পৃষ্ঠা এক হতে পারে না।
বিষয়টি নিয়ে জেলা রেজিষ্টার আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা বিয়ে পড়ানো মৃত কাজির কাছে থাকা ডকুমেন্ট উদ্ধারের চেষ্টা করছি। সেটি হাতে পেলে পুলিশ ব্যুরো অব আনভেস্টিগেশন এর চিঠির জবাব দেয়া হবে।
তবে দুই কাবিন নিয়ে এক মামলার বাদী মাছুরা খাতুন কথা বলতে রাজি না হলেও বিবাদী পক্ষে তার সাবেক স্বামীর বড় ভাই মতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, তাদের কাবিনটিই সঠিক। তাদেরকে হয়রানী ও অপমান অপদস্ত করতেই জাল কাবিনে তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে”।