September 20, 2024 - 2:15 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসতালিকাভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক: দেওয়ান মুজিবুর রহমান

তালিকাভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক: দেওয়ান মুজিবুর রহমান

spot_img

১৯৭৬ সালে অগ্রণী ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংকিং খাতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন চতুর্থ প্রজন্মের বাণিজ্যিক ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের (এনআরবিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দেওয়ান মুজিবুর রহমান। ক্যারিয়ারের নানা পর্যায়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে বর্তমান প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে এমডির দায়িত্ব পালন করেছেন। এনআরবিসিবির ব্যবসার নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আইবিএ স্নাতক।

প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর ব্যবসা নিয়ে বোদ্ধাদের অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। এনআরবিসিবি কেমন চলছে?
দেওয়ান মুজিবুর রহমান: আমি যতটুকু অনুধাবন করি, প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার আশঙ্কা থেকেই অনেকে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার বিপক্ষে ছিলেন। যা-ই হোক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ২০১৩ সালে এনআরবিসিবির যাত্রাকালে আমরা একদল পেশাদার ব্যাংকার এখানে প্রারম্ভিক টিমটি গঠন করি। নতুন একটি ব্যাংক গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জটি আমরা প্রত্যেকেই উপভোগ করেছি।
৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রার সাড়ে চার বছরের মাথায় এখন ব্যাংকে আমানত সাড়ে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, ঋণ ও অগ্রিম যেখানে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বেড়ে ওঠার গতিটি মন্দ বলা যাবে না। এক বছরের ব্যবধানে আমানত অন্তত ২৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রথম তিন প্রান্তিকে ঋণ ও অগ্রিম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবে ঋণ আমানত অনুপাতটি আমরা সবসময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সীমায় মেইনটেইন করি।

প্রশ্ন: উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল হেলথ কেমন?

দেওয়ান মুজিবুর রহমান: সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটাল ৬০৭ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাধ্যবাধকতার চেয়ে যথেষ্ট বেশি। পেশাদার ব্যাংকার হিসেবে আমরা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণকে খুবই গুরুত্ব দেই। আপনারা জানেন, বড় ঋণে ব্যাংকের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। পোর্টফোলিও তুলনামূলক ছোট হওয়ায় নতুন প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংকের জন্য বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমরা ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত বড় ঋণ দিতে পারি। আমাদের ব্যাংকে এখনো এটি ৪৩ শতাংশের ঘরে। এক বছর আগেও সেটি ছিল ৩৭ শতাংশে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের ঋণ পোর্টফোলিওর ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশই ছিল এসএমই খাতে। একটি নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য পারসেন্টেজটা খারাপ না।

অন্তর্বর্তী উপাত্ত বলছে, গত এক বছরে ব্যবসা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনাদায়ী ঋণের হারও (এনপিএল) কিছুটা বেড়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি চাইলে এটি খুব অস্বাভাবিক না। এনপিএল প্রসঙ্গে আমাদের গত বছরের অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করতে চাই। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমাদের এনপিএল ছিল ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। আপনারা জানেন, শেষ প্রান্তিকে ব্যাংকাররা ঋণ আদায়ে জোর তত্পরতা চালান। গ্রাহকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বাড়িয়ে আমরা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এনপিএল রেশিও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হই। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনপিএল দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এটিও কমিয়ে আনার জন্য আমাদের রিকভারি কর্মকর্তারা নিরলস কাজ করে চলেছেন। গ্রাহকদের রেসপন্সে এখন পর্যন্ত যতটুকু বুঝতে পারছি, তাতে আমি আত্মবিশ্বাসী বছর শেষে এ হার ২ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। ইন্ডাস্ট্রির গড় অনুপাতের বিপরীতে বিবেচনা করলে অনাদায়ী ঋণ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।

প্রশ্ন: আপনাদের পর্ষদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল কেন?

দেওয়ান মুজিবুর রহমান: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিচক্ষণ উপসংহার, পর্ষদে তাদের একজন পর্যবেক্ষক থাকলে অন্য কয়েকটি ব্যাংকের মতো এনআরবিসিবির পারফরম্যান্সও ভালো হবে। আপনারা জানেন, সে সময়টায় আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির বিষয় সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকে বিষয়গুলোকে খুব সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখলেও আমি মনে করি, ব্যবসায় এটি অস্বাভাবিক কিছু না। আমাদের উদ্যোক্তারা প্রত্যেকেই এনআরবি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। দেশের ব্যবসায়িক বাস্তবতায় তারাও প্রথমবারের মতো এসেছেন। সেখানে কিছু চ্যালেঞ্জ তাদেরও ফেস করতে হয়েছে। যা-ই হোক, পরবর্তীতে এগুলো সমাধান হয়ে যায়। বিষয়টি যাতে ব্যাংকের ব্যবসায় কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, পর্যবেক্ষক এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে আপনাদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো কী?

দেওয়ান মুজিবুর রহমান: শক্তি হলো আমাদের নতুন সেটআপ, যেটিকে সঠিক ডিরেকশনে কাজে লাগানোর পথে বাধা অনেক কম। মানবসম্পদ, অবকাঠামো, লোনবুক প্রতি ক্ষেত্রেই বিষয়টি অনুধাবন করি। এ ব্যাংকে আমরা সত্যিকার অর্থেই একটি নতুন উদ্যম নিয়ে কাজ শুরু করতে পেরেছি। আর ডিসঅ্যাডভান্টেজগুলোর মধ্যে প্রথমেই বলতে হবে, অনেক গ্রাহক আমাদের কাছে প্রতিযোগিতামূলক অফার প্রত্যাশা করেন, সেটি আমানতের ঋণেও। এটি আমাদের মার্জিন কমিয়ে দেয়।

প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশি প্রযোজ্য। আমরা প্রতিযোগিতা করেই তাদের সেবা দিচ্ছি। আমদানি-রফতানি অর্থায়নের কথাই ধরুন না, আমাদের ব্যাংকে এখন পর্যন্ত ২১ হাজারের বেশি এলসি খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এলসির আকারেও আমরা একটি চমত্কার মিক্স নিশ্চিত করেছি। খুব বড় আকারের এলসি অর্থায়নের ব্যাপারে আমরা সবসময়ই সতর্ক থাকি।

ব্যক্তিশ্রেণীর আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধনটি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। যোগ-বিয়োগ করে দেখা যাচ্ছে, আমাদের ব্যাংকে প্রতিদিনই শতাধিক আমানত হিসাব খুলছেন তারা। এর বাইরে লোন অ্যাকাউন্টগুলো তো রয়েছেই।
শাখা নেটওয়ার্কে আমরা পুরনো ব্যাংকগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। এখন পর্যন্ত ৫৫টি স্থানে শাখা করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির নিরীখে শাখা সম্প্রসারণের চেষ্টা করে যাব। এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার বিকল্প হিসেবে অনেক মানুষের কাছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

যত দূর মনে পড়ে প্রথম দফায় আপনারা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। এজেন্ট ব্যাংকিং কেমন চলছে?
ঠিকই বলেছেন। আমরা ও ব্যাংক এশিয়া প্রথম দফায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছিলাম। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এরই মধ্যে আমাদের একটি ইউনিকনেস দাঁড়িয়ে গেছে। দেশের প্রায় ৪০০ লোকেশনে আমাদের এজেন্টরা রিয়েলটাইম ট্রানজেকশন সুবিধা দিচ্ছে। এর অর্থ, আমাদের একটি শাখায় লেনদেন করলে আপনি যে সুবিধা পাবেন, এজেন্ট লোকেশনেও একই সুবিধা পাবেন। কোর সিস্টেমের সঙ্গে আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কটিকে ট্যাগ করেছি। তিন স্তরের নিরাপত্তা দেয়ালও নিশ্চিত করা হয়েছে। এজেন্ট আউটলেট থেকে রিয়েল টাইম ট্রানজেকশন সেটলমেন্টের সুবিধা দেশের আর কোনো ব্যাংক দিচ্ছে বলে জানা নেই। আউটলেটগুলো থেকে ঋণ গ্রহণের আবেদনও নিকটবর্তী শাখায় পাঠানো হচ্ছে। এখন গ্রামের মানুষ শহরে না গিয়েই ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। নরসিংদী জেলার এজেন্ট লোকেশনগুলো থেকে সরকারের বিভিন্ন ওয়েলফেয়ার বেনিফিট পাচ্ছে মানুষ। আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিনা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ‘এজেন্টস অব চেঞ্জ’ শীর্ষক একটি সচিত্র প্রতিবেদনে অগ্রগতিগুলো চমত্কারভাবে তুলে ধরেছে।

প্রশ্ন: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় এগিয়ে আসছে। প্রস্তুতি কেমন?

দেওয়ান মুজিবুর রহমান: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের ২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। এজন্য চাই সাউন্ড ফিন্যান্সিয়াল হেলথ ও অর্গানিক গ্রোথ। আমাদের মুনাফার চিত্রটি আশাব্যঞ্জক। ২০১৫ সালে পরিচালন মুনাফা ছিল ১০৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে তা ১৭২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। চলতি বছর প্রথমার্ধে পরিচালন মুনাফা ছিল ৭৫ কোটি টাকা। প্রথম বছর ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ না দিলেও সর্বশেষ তিন বছরই লভ্যাংশ পেয়েছেন আমাদের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডাররা। তবে তালিকাভুক্তির পর শেয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। তখন ভালো ইপিএস আর লভ্যাংশ নিশ্চিত করাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা সে চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

সৌজন্যে: দৈনিক বণিক বার্তা। 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ