বেনাপোল প্রতিনিধি : ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের দুই দিনের (৩০ ও ৩১ জানুয়ারি) ডাকা কর্মবিরতির প্রথম দিনে বেনাপোল বন্দরে কার্যক্রম বন্ধ থাকার আধাঘন্টা পর স্থগিত করার ঘোষনা মাইকিং করার পর আবারো কর্মবরতি চলছে। ফলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধসহ কাস্টমস ও বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল থেকে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন ও স্টাফ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ কাস্টমস হাউজের সামনে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেন। ভুল তথ্যে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে অনেে স্বীকার করেছেন।
এদিকে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের দু‘পাশে পণ্য নিয়ে দুই দেশের শত শত ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যসহ কাঁচামালের চালান রয়েছে। খালি ট্রাকগুলো পণ্য লোড করতে না পেরে বন্দরের আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছে। কর্মবিরতিতে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন একাত্মতা ঘোষনা করেছেন।
বেনাপোল কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ¦ নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন দাবি আদায়ে কর্মবিরতির কোন বিকল্প নেই। ফেডারেশনের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা সংশোধন, সিপিসি ও এইচএসকোড সংক্রান্ত ভুলের কারণে শতকরা ২০০ থেকে ৪০০ ভাগ জরিমানা রহিতসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে গত ২১ জানুয়ারি ঢাকায় ফেডারেশনের কার্যালয়ে এক বৈঠকে ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি সারা দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে দুই দিন কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একটি চিঠিও পাঠানো হয়।
সভায় সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব শামছুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব সুলতান হোসেন খান এর সঞ্চালনায় সভায় ঢাকা, চট্রগ্রাম, মংলা, বেনাপোল, সোনা মসজিদ, হিলি, ভোমরাসহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনের সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয় কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০১৬ জারির পর ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বারবার প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এরপর কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ প্রণয়নের সময়েও ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা গুরুত্ব না দিয়েই বিধি জারি করা হয়েছিল। দেশের সব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ায় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য লাইসেন্সিং রুলের কয়েকটি বিধি ও উপবিধি সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া হলেও বাজেট প্রস্তাবনায় কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। এ বিষয়ে গত বছরের ২৮ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব একেএম নূরুল হুদা আজাদ এর নেতৃত্বে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়েছিল। বৈঠকে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এর কিছু ধারা সংশোধনের বিষয়ে সম্মত্তি জ্ঞাপন করলেও অদ্যবধি কোন কার্যকনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
গত রবিবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে সোম ও মঙ্গলবার (৩০ ও ৩১ জানুয়ারি) দুই দিন কর্মবিরতি পালন করার জন্য সকল কাস্টমস হাউজ ও স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পর তড়িঘড়ি করে রোববার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর প্রথম সচিব (কাস্টমস রফতানি ও বন্ড) আবুল বাসার মোঃ শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এর কতিপয় ধারা ও উপধারা এবং বিভিন্ন বিধিবিধান সংশোধন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে ফেডারেশন অব কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সাথে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।চিঠি প্রাপ্তির পর নেতৃবৃন্দ কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
ফেডারেশনের অব কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব শামছুর রহমান জানান, কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ব্যাপারে এনবিআরের চিঠি ও মৌখিক আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা ফেডারেশনে মিটিং এ বসেছি। সেখানে পরবর্তী কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেটা স্ব স্ব এসোসিয়েশনকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও দাবি না মানায় গত বছরের ৭ জুন সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেছিল ফেডারেশনের আওতাভুক্ত সকল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।