দেশে চার্টার্ড সেক্রেটারিজ পেশা ও করপোরেট সুশাসন উন্নয়ন নিয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশের (আইসিএসবি) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। তিনি ইনস্টিটিউটের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত আছেন করপোরেট সেক্রেটারিজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের (সিএসআইএ) সঙ্গে। একসময় কোম্পানি সচিবদের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন আইএফসিএসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক ফোরামের সনদধারী প্রশিক্ষক হিসেবে পাঠদান করছেন কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল প্র্যাকটিসেস, নিরীক্ষা, করপোরেট সুশাসন ও মানবসম্পদ বিষয়ে। বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের সঙ্গে আছেন তিন দশকের বেশি সময় ধরে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর ও কোম্পানি সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। করপোরেট সুশাসন-সংক্রান্ত আইন ও চর্চার পাশাপাশি চার্টার্ড সেক্রেটারিজ পেশা সম্পর্কে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকার দিয়েছেন। কর্পোরেট সংবাদের পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করল আইসিএসবি। আপনি প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ইনস্টিটিউটের শুরু ও বিকাশ সম্পর্কে জানাবেন?
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ: কোম্পানি আইনের ধারা ২৮ অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্স নিয়ে ‘ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যান্ড ম্যানেজারস অব বাংলাদেশ (আইসিএসএমবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩ জন প্রফেশনাল এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। উদ্দেশ্য, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইনস্টিটিউট থেকে চার্টার্ড সেক্রেটারি তৈরি এবং এ পেশা ও করপোরেট সুশাসন উন্নয়ন।
১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ধারা ২ অনুযায়ী কোম্পানি সচিব একটি বিধিবদ্ধ পদ। এজন্য দরকার পেশাগত যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা। তবে সে যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দক্ষতার ক্রাইটেরিয়াগুলো সুনির্দিষ্ট করা নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কোম্পানি সচিবের যোগ্যতা হলো কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল সনদ। দেশে করপোরেট সেক্টরে সুশাসন আনয়ন ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরাও চার্টার্ড সেক্রেটারি তৈরির গুরুত্ব অনুধাবন করি, যার পরিপ্রেক্ষিতেই আইসিএসএমবি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতিবেশী ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশে বেশ আগেই সংশ্লিষ্ট আইনের মাধ্যমে কোম্পানি সচিবের পেশাকে একটি আইনি ভিত্তি দেয়া হয়। একই চিন্তা থেকে আইসিএসএমবি প্রতিষ্ঠার পর পরই চার্টার্ড সেক্রেটারিজ আইনের ওপর গুরুত্বারোপ করি আমরা। ১৯৯৮ সালেই খসড়াটি করা হয়। খসড়াপ্রণেতাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। খসড়াটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। নীতিনির্ধারণী মহলে বেশ কয়েকজনের নাম আমি এখনো স্মরণ করি, যারা এ বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। তার পরও কার্যত প্রায় এক দশকের বিরতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মন্ত্রিপরিষদে আলোচনার পর খসড়াটি গৃহীত হয়। তবে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় বিষয়টি আবারো পিছিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০৯ সালে তত্কালীন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যাক্টকে বেশ সিরিয়াস এজেন্ডা হিসেবে নেন। পরের বছরই জাতীয় সংসদে পাস হয় চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যাক্ট, ২০১০। আইন হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ইনস্টিটিউটের নাম বদলে হয় আইসিএসবি। প্রয়োজনীয় মানদণ্ড আত্মস্থ করায় করপোরেট সেক্রেটারিয়াল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনেরও (সিএসআইএ) সদস্যপদ পায় আইসিএসবি।
প্রশ্ন: আমরা যতটুকু জানি, ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে আপনার ভূমিকা অনেক। আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানতে চাই…
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা শেষে আমি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি প্রফেশনে জড়িত ছিলাম। ১৯৮৬ সালে সিঙ্গার বাংলাদেশে অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। এখনো সিঙ্গারেই আছি, তবে আরো বড় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত কোম্পানি সচিবের কাজ করছি। ২০০৮ সালে নির্বাহী পরিচালকের পদ পাই। মাঝে ২০১০-২০১৫ সময়ে বাংলাদেশে সিঙ্গারের পর্ষদেও ছিলাম।
আমরা ১৩ জন চার্টার্ড সেক্রেটারিজ কোয়ালিফায়েড শুরু থেকেই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও চার্টার্ড সেক্রেটারিজ পেশার উন্নয়ন নিয়ে বেশ সিরিয়াস ছিলাম। আইসিএসবির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মোজাফফর আহমেদ, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইদুজ্জামান, ভাইস প্রেসিডেন্ট এ. কে. এ. মুক্তাদির, সচিব এমএস আলম মিঞাসহ আরো কয়েকজনের নাম এ তালিকায় আসবে। আমি শুরুতে ইনস্টিটিউটের কোষাধ্যক্ষ ছিলাম। পরবর্তীতে পাঠদান, সিলেবাস ও মানদণ্ড উন্নয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি— সব ক্ষেত্রেই কাজ করেছি। মাঝে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও অংশ নিয়েছিলাম। একদফা বিরতির পর গত বছর আবারো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছি।
প্রশ্ন: করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের আইনি কাঠামো এখন পর্যন্ত কতটা এগিয়েছে? অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতায় আপনি এখানে কোনো দুর্বলতা দেখছেন কি?
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ: কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এ সুনির্দিষ্টভাবে অনেক কিছুই নেই। আপনারা জানেন, ২০০৬ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রথম একটি করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন জারি করে। ২০১২ সালের সংশোধনীতে সেটিকে আরো যুগোপযোগী করা হয়। সেখানে সব তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে একজন করে কোম্পানি সচিব থাকা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়। দেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিএসইসির এ গাইডলাইন অনুসরণ করছে। এর বাইরে প্রাইমারি রেগুলেটরদের নির্দেশনা মানতে হয় আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোকে।
তার পরও আমরা দেখি, কিছু কোম্পানিতে সুশাসন পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। এর কারণ কিছুটা আইনি, আর বাকিটা চর্চার দুর্বলতা। উদাহরণ হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচালকের কথা বলা যায়। প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক থাকা বাধ্যতামূলক। সব কোম্পানিতেই তা রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখি, স্বতন্ত্র পরিচালকরা কার্যত তাদের কাজটি করছেন না বা করতে পারছেন না। তারা যদি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কোম্পানির সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে অবস্থান না নেন, সেটি স্বতন্ত্র পরিচালকের ধারণাটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্বতন্ত্র পরিচালককে হতে হবে পেশাগত যোগ্যতা, দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি, যিনি পর্ষদ সভায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা ও সত্সাহস রাখেন। করপোরেট ওয়ার্ল্ডে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে স্বতন্ত্র পরিচালকরা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় পর্ষদ সভায় লড়েছেন।
আমাদের দেশে পর্ষদে ২০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকা বাধ্যতামূলক। গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিস বলে, সেটি এক-তৃতীয়াংশ হওয়া উচিত। তখন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকদের কণ্ঠটি আরো শক্তিশালী হয়।
এছাড়া পর্ষদ সভায় অংশগ্রহণে একটি নামমাত্র ফি দেয়ার যে রীতি আমাদের দেশে চালু রয়েছে, সেখানেও পরিবর্তন দরকার। একজন অভিজ্ঞ প্রফেশনাল এক্সপার্ট একটি কোম্পানির পর্ষদ সভায় হয়তো হাতেগোনা কয়েক দিন অংশ নেন। তবে পর্ষদ সদস্য হিসেবে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য তাকে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিবেদন ও নথিপত্র পড়তে হয়। পর্ষদ সভায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। নামমাত্র সম্মানীতে তিনি তার অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার কীভাবে করবেন— এটি একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীও বোঝেন। তাই কোম্পানির আর্থিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক করে বিএসইসি এ সম্মানীর একটি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে।
আরেকটি বিষয়, বিভিন্ন দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল করে দেয়, কোনো কোম্পানি তার বাইরে যেতে পারে না। আমাদের এখানে বিএসইসি যেমন নিরীক্ষকদের একটি প্যানেল তৈরি করে দিয়েছে। এসবের অর্থ হলো নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও ভালো ট্র্যাক রেকর্ড ছাড়া কাউকে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষার এসব দায়িত্ব দেয়া যাবে না। প্যানেলভুক্ত কেউ তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তিনি পরবর্তীতে তালিকা থেকে বাদও পড়তে পারেন। করপোরেট সুশাসন জোরদার করতে দেশে নিরীক্ষক প্যানেলের মতো স্বতন্ত্র পরিচালকদেরও একটি প্যানেল করে দিতে পারে বিএসইসি।
এরপর আসি বোর্ড কমিটিগুলোর ব্যাপারে। বেস্ট প্র্যাকটিস বলে, একটি কোম্পানির পর্ষদ সদস্যদের নিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গঠন করতে হবে; যা সে প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিশ্চিতকল্পে কাজ করবে। এগুলো হলো অডিট কমিটি, রেম্যুনেরেশন কমিটি ও নমিনেশন কমিটি। অডিট কমিটি কোম্পানির আর্থিক হিসাব-নিকাশ, ঝুঁকির মাত্রা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করবে। রেম্যুনেরেশন কমিটির দায়িত্ব, কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক ও নির্বাহীদের দেয়া সুযোগ-সুবিধার যৌক্তিকতা ও পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মনোবল ও প্রেষণা বাড়ানোও তাদের একটি দায়িত্ব। তৃতীয়ত আসে নমিনেশন কমিটির কথা। তারা কাজ করবে কোম্পানির পর্ষদ সদস্যদের মনোনয়ন ও নিয়োগ নিয়ে। সুশাসনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে তালিকাভুক্ত কয়টি কোম্পানিতে এসব কমিটি কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে একটি ধারণা আপনাদেরও আছে। বিশেষ করে নমিনেশন কমিটি নিয়ে আমরা অনেকটাই নীরব। করপোরেট সুশাসনের কথা ভাবলে এর কোনো সুযোগই নেই।
করপোরেট সুশাসনের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয় এখনো আমাদের এখানে চর্চা হয়। এর মধ্যে পর্ষদে অফিস অব প্রফিট থেকে আসা ব্যক্তির প্রাধান্য অন্যতম। সুশাসনের ধারণায় বলা হয়, উদ্যোক্তা, শেয়ারহোল্ডার, নির্বাহী ও স্বতন্ত্র পরিচালকদের সমন্বয়েই একটি আদর্শ পর্ষদ গঠিত হয়। বেস্ট প্র্যাকটিস হলো, পর্ষদ চেয়ারম্যান হবেন নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর; যিনি একজন প্রফেশনাল এক্সপার্ট এবং কোম্পানিতে তার আর্থিক স্বার্থ খুব বড় নয়। ডে টু ডে অপারেশন্সের সঙ্গেও তার একটি নিরাপদ দূরত্ব থাকা উচিত। অনেক বহুজাতিক কোম্পানির পর্ষদেও মূল কোম্পানির নির্বাহীদের চেয়ারম্যান করা হয়। এটি কাম্য নয়, কারণ তিনিও অফিস অব প্রফিট থেকে এসেছেন।
প্রশ্ন: কোম্পানি সচিবরা একটি প্রতিষ্ঠানে কী ভূমিকা রাখেন? অর্থনৈতিক উন্নয়নে চার্টার্ড সেক্রেটারিজ পেশার গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলবেন…
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ: কোম্পানি সচিবের পদটিকে চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, বিধিবদ্ধ কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা ইত্যাদি বলে অভিহিত করা হয়। সুশাসনের জন্য প্রতিটি পাবলিক কোম্পানিতেই একজন কোম্পানি সচিব থাকা দরকার। সারা পৃথিবীতেই কোম্পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করছেন তারা। করপোরেট সুশাসন প্রশ্নে তিনি পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহীর উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন। এজন্য তাকে করপোরেট সাচিবিক, প্রশাসনিক ও আইনগত দিকগুলোর পাশাপাশি স্কুল অব বিজনেসের অন্য শাখা-উপশাখাগুলোতেও দক্ষ হতে হয়। আইসিএসবির কারিকুলাম আমরা সেভাবেই সাজিয়েছি। সময়ে সময়ে সেখানে আপগ্রেডেশন হয়, যাতে আমাদের সদস্যরা বিশ্বের তুলনায় পিছিয়ে না থাকেন।
দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থার জন্যই করপোরেট সুশাসন আবশ্যক। অর্থনীতির জন্য বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে বোধ করি নতুন করে বলতে হবে না। শুধু এটুকু বলব, বিনিয়োগের বিশ্ব যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মেলাতে হলে করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আইনকানুন যেমন যুগোপযোগী হতে হবে, তেমনি সব স্তরে করপোরেট সুশাসনের ধারণা ও চর্চা জোরদার করতে হবে।
প্রশ্ন: আইসিএসবি প্রতি বছর দেশে করপোরেট সুশাসনে একটি অ্যাওয়ার্ড দেয়। এ সম্পর্কে বলবেন?
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ: বাংলাদেশে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র আইসিএসবিই করপোরেট সুশাসনের জন্য এমন স্বীকৃতি ও সম্মান দিচ্ছে। এ বছর আমরা চতুর্থবারের মতো করপোরেট গভর্ন্যান্স অ্যাওয়ার্ড দিতে যাচ্ছি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় করপোরেট সুশাসন উত্সাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
এজন্য আমরা তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন কভার করি। সুশাসনের বিভিন্ন মানদণ্ডে তাদের মার্কিং করা হয়। জুরি বোর্ডে বিভিন্ন সেক্টরের এক্সপার্টরা থাকেন। অভিজ্ঞতার কারণে তারা সমাজে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, এমন কাউকে আমরা বিচার-বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করি না।
একটি কোম্পানি তাদের করপোরেট সুশাসনের স্বীকৃতি পেলে তারা উত্কর্ষ সাধনে মনোযোগী হয়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমার বিশ্বাস, প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে অন্যরাও তাতে উত্সাহ পায়। আমাদের আশাবাদটি এখানেই।
আপনাকে ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ।
সৌজন্যে: দৈনিক বণিক বার্তা